জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে তাঁদের দাম্পত্য জীবনের এক অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণা করেছেন। শুক্রবার ৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পাবলিক করা এই পোস্টে একদিনের মধ্যেই ৫৩ হাজারেরও বেশি রিঅ্যাক্ট এবং ১০ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।
ব্যক্তিগত এই লেখাটি তিনি সরাসরি ‘কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের’ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন। এই লেখাটি জনসমক্ষে আনার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানান, “আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিলো।) মত ভুল যেনো না করে।” তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন যাতে অন্যরা এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
বিচ্ছেদের আগের ঘটনাপ্রবাহের স্মৃতিচারণায় গুলতেকিন খান উল্লেখ করেন যে, হুমায়ূন আহমেদ তখন নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির কিউমিলেটিভ পরীক্ষা নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন। সেই সময়েই একদিন পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় তিনি বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁকে কোনো কারণ ছাড়াই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। সেই কঠিন মুহূর্তটি বর্ণনা করে তিনি লেখেন, “আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরো রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেলছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা!” শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দিয়েও কোনো ফল না পেয়ে তিনি অবশেষে এক আমেরিকান বন্ধুর (অ্যান) সাহায্যে আশ্রয় নেন। বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার পর, মন খারাপ নিয়েও তিনি বিচ্ছেদের কথা বিশ্বাস করতে পারেননি: “না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে! তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্যে খুব মন খারাপ লাগছে!”
লেখকের অসুস্থতার পর ড. ইয়াসমীন হকের মাধ্যমে পরিচিত কয়েকজন আইনজীবী গুলতেকিন খানের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই সময়কার কথোপকথনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সত্যতা উঠে আসে। আইনি আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁদের কোনো জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট নেই এবং যখন তাঁরা সম্পর্ক নিয়ে কিছু একটা বলতে অনুরোধ করেন, তখন তিনি বলেন: “আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে! … যতদুর জানি সব ধরণের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন!” আইনজীবীরা তখন হুমায়ূন আহমেদের লেখা কয়েকটি বইয়ের (যেমন: ‘হোটেল গ্রেভারিন’) আন্ডারলাইন করা অংশ দেখিয়ে জানতে চান তিনি আগে থেকেই বিচ্ছেদ চাইছিলেন কি না। এর জবাবে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন: “ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! এ্যামেরিকাতে কী ভাবে জানবো? ‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তাঁর আত্মজীবনী মূলক বই এ অনেক কিছুই তাঁর কল্পনা থেকে লেখা।” হুমায়ূন আহমেদের একটি বক্তব্যও তিনি উল্লেখ করেন: “একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে!”
পুরো ঘটনার শেষে নিজের বোকামি ও দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে গুলতেকিন খান আক্ষেপ প্রকাশ করেন। মেয়ের কথা ভেবে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন: “আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবোনা। ওর হাজবেন্ডের যেনো সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার!” এই দীর্ঘ স্মৃতিচারণা শেষ হয়েছে এই প্রশ্ন দিয়ে: “আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানোঐ লয়্যারকে জিজ্ঞেস করতে ‘আসলে তখনি নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ঐ ভদ্রলোক কে ডিভোর্স দেয়া উচিত ছিলো, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!”
মন্তব্য করুন