বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :
সিলেটের বিশ্বনাথে ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান লিলু হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আকুল মিয়া (৩৪) অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশের একটি টিম শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৪টায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের খামরাখাই গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মৌলভীবাজারের শেরপুর ঈদগাহ রোড আবাসিক এলাকায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত একটি ডাকাতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে, আকুল মিয়া বিশ্বনাথের ব্যবসায়ী লিলু হত্যারও মাস্টারমাইন্ড। তাকে রোববার (২৭ এপ্রিল) মৌলভীবাজার আদালতে হাজির করা হলে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে; আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার সদর থানার এসআই জয়ন্ত সরকার।
পুলিশ সূত্র জানায়, আকুল মিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা ও অন্যান্য অপরাধে মোট ১৪টি মামলা চলমান রয়েছে এবং ৯টি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি আছে। ওই ডাকাতি মামলায় আকুল দ্বিতীয় আসামি, প্রথম আসামি রায়হান আহমদ (২৫) এবং তৃতীয় আসামি আফাজ মিয়া (৪৯)। একই রাতে পৃথক অভিযানে রায়হানকে নিজ ঘর থেকে ছয় রাউন্ড কার্তুজসহ এবং আফাজ মিয়াকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ১৪ আগস্ট রাতে নওধার গ্রামের বাসিন্দা, বৈরাগী বাজারের সাবেক ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান লিলু এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। দুই দিন পর, ১৬ আগস্ট, নিহতের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বিশ্বনাথ থানায় একটি অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্তের এক পর্যায়ে আফজাল আহমদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ থেকে মাহবুবুর রহমান নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মাহবুবের দেখানো স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা এবং নিহতের ব্যবহৃত জুতা উদ্ধার করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাহবুব জানান, আকুল মিয়া তাকে ভাড়া করে লিলুকে হত্যার জন্য নিয়ে আসেন।
তদন্তে জানা যায়, আকুল মিয়া ও তার ভাইয়েরা নওধার গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধকর্মে জড়িত ছিল। এক ভাই ক্রসফায়ারে এবং আরেকজন গণপিটুনিতে নিহত হন। আরও একজন ভাই পুলিশের গুলিতে পা হারান। তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন লিলু, যে কারণে আকুলদের ধারণা জন্মায় লিলু তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। প্রতিশোধ নিতেই তারা হত্যার ছক কষে।
পিবিআই সূত্র জানায়, কারাগারে মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আকুলের পরিচয় হয়। সেখানেই লিলুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উসকে দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে মাহবুব আকুলের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
পিবিআই-এর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম জানান, ‘ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার আকুল মিয়া, বিশ্বনাথের লিলু হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারীও। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’