বিদেশে পাচার অর্থ উদ্ধারে আগ্রহী ৩ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান


বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে উদ্যোগ জোরদার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সম্পদ ফেরাতে ৫ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বের তিনটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, যারা মামলা পরিচালনায় তহবিল সহায়তা দিয়ে থাকে।

গত ১৭ থেকে ২১ মার্চ লন্ডন সফরের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান আহসান এইচ মনসুর প্রতিষ্ঠান তিনটির সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি তাদের বাংলাদেশে এসে মামলা সংক্রান্ত প্রাথমিক নথিপত্র পর্যালোচনার আমন্ত্রণ জানান।

এ তথ্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস বুধবার লিখিতভাবে জানিয়েছে।

গভর্নর মনসুর ওই সফরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি নৈতিক এবং রাজনৈতিক দায়ও।

প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, যদি যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, তারা সর্বোচ্চ ৫ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। তারা মামলার খরচ, তদন্ত সংস্থা নিয়োগ এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সরাসরি সহযোগিতা করতে চায়।

গভর্নরের সফরের সময় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যেখানে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা, ফরেনসিক তদন্তকারী এবং দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন। সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বেসরকারি খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সম্পদ উদ্ধার কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি-আইসিএআর)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ এই বছর এপ্রিলের মধ্যেই ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ উদ্ধারে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা শুরু হবে।

একই সময়ে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।

গভর্নর লন্ডনে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি), দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, স্পটলাইট অন করাপশনসহ বিভিন্ন সুশীল সমাজ প্রতিনিধি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে যুক্তরাজ্যের এমপি জো পাওয়েল, রূপা হক, ব্যারোনেস উদ্দিন এবং সাবেক বিচারমন্ত্রী অ্যালেক্স চক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যাতে বাংলাদেশকে পাচার অর্থ উদ্ধারে আরও সহযোগিতা করা হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

সফরে গভর্নর ব্রিটিশ ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে এফসিডিও-এর ভূমিকার প্রশংসা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস জানায়, বাংলাদেশ সরকার বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সরকারি দুর্নীতি এবং ব্যাংক খাতকে মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং দেশের শীর্ষ ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এই তালিকায় বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, এস আলম, জেমকন, নাবিল, নাসা, ওরিয়ন, সিকদার, আরামিট ও সামিট গ্রুপ রয়েছে।

দুদকের পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ তদন্তে যুক্ত হয়েছে। এই সমন্বিত কার্যক্রমের তদারকি করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গভর্নরের লন্ডন সফরের সময় আল জাজিরা, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তিনি সাক্ষাৎকার দেন এবং বাংলাদেশের সম্পদ উদ্ধার প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।

এই প্রচেষ্টাকে আরও আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের দুটি কৌশলগত যোগাযোগ সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন