সিলেটের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান: আপনার ভ্রমণ তালিকায় থাকা উচিত

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। এই অঞ্চল তার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ধর্মীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ঘেরা চা-বাগান, স্বচ্ছ জলধারার নদী আর মেঘে ঢাকা সবুজ টিলা সিলেটকে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি এক স্বপ্নের গন্তব্য। তাইতো সময় সুযোগ হলে সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমীরা। চলুন জেনে নেই এই জেলার অপরূপ ১০ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ।

১. জাফলং – প্রকৃতির কন্যা

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জাফলং ‘প্রকৃতি কন্যা’ নামে পরিচিত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত এই স্থানটি তার স্বচ্ছ পিয়াইন নদী, চা-বাগান, পাথরের সমাহার এবং সবুজ পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে জাফলংয়ের দূরত্ব প্রায় ৬২ কিলোমিটার। বাস, মাইক্রোবাস বা সিএনজি দিয়ে সহজেই পৌঁছানো যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এখানে যাওয়ার সবচেয়ে সুন্দর সময়, তবে শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) পানির স্বচ্ছতা উপভোগ করা যায়।



২. বিছানাকান্দি – পাথর, নদী ও পাহাড়ের মিলনস্থল

বিছানাকান্দি মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এক অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। এখানে পিয়াইন নদী, বড় বড় পাথর এবং ঝরনার প্রবাহ এক অনন্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষত বর্ষাকালে বিছানাকান্দি ঘুরে দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিছানাকান্দি। বাস, মাইক্রোবাস বা সিএনজি নিয়ে সহজেই পৌঁছানো যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে সুন্দর। শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) পানি কমে যায়।



৩. লালাখাল – নীল জলের স্বর্গ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালাখাল, তার স্বচ্ছ নীল জলের জন্য বিখ্যাত। মেঘালয়ের পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং নৌকা ভ্রমণ এই স্থানটিকে আরও মনোরম করে তোলে।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে জৈন্তাপুরের সারিঘাটে গিয়ে নৌকায় লালাখাল যাওয়া যায়।

সেরা সময়:

শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) নদীর পানি সবচেয়ে স্বচ্ছ ও নীল থাকে।



৪. মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত – বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১৬২ ফুট উচ্চতা থেকে গড়িয়ে পড়া জলরাশি এখানে একটি নয়নাভিরাম দৃশ্য তৈরি করে।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মাধবকুণ্ড। বাস, মাইক্রোবাস বা ট্রেনে কুলাউড়া হয়ে যাওয়া যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জলপ্রপাতের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে।

৫. ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর – নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিস্ময়

ভোলাগঞ্জ, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি স্থান, যা তার সাদা পাথরের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানে মেঘালয়ের পাহাড় এবং সাদা পাথরের একটি চমকপ্রদ দৃশ্য দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ভোলাগঞ্জ যাওয়া যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়।



৬. লোভাছড়া – সিলেটের এক লুকায়িত রত্ন

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় অবস্থিত লোভাছড়া একটি সুন্দর স্থান, যেখানে পাহাড়, নদী, চা-বাগান এবং প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে। এখানে নদীর স্বচ্ছ জলরাশি, ছোট ঝরনা এবং বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটগামী বাস বা সিএনজিতে কানাইঘাট বাজারে গিয়ে মোটরসাইকেলে লোভাছড়ায় যাওয়া যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) নদী ও ঝরনার সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।


৭. রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট: বাংলাদেশের আমাজন

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। বর্ষাকালে এই বনটি পানির নিচে ডুবে যায় এবং গাছপালা পানিতে ভেসে থাকে, যা এটি এক বিশেষ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে সিএনজি, বাস বা প্রাইভেট কারে ১-১.৫ ঘণ্টায় রাতারগুল পৌঁছানো যায়।

সেরা সময়:

বর্ষাকাল (জুন-অক্টোবর) পানির স্তর বেশি থাকে, বনটি স্বপ্নিল দৃশ্য তৈরি করে। শীতকালেও ভ্রমণ করা যায়, তবে পানির স্তর কম থাকে।

৮. মালনীছড়া চা-বাগান – বাংলাদেশের প্রাচীনতম চা-বাগান

সিলেটের সদর উপজেলার মালনীছড়া চা-বাগান বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন চা-বাগান। এটি চায়ের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এবং এখানকার পাহাড়ি দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে মালনীছড়া চা-বাগানে পৌঁছাতে সিএনজি, মাইক্রোবাস বা বাস ব্যবহার করা যায়, যাত্রার সময় ১৫-২০ মিনিট।

সেরা সময়:

শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) চায়ের গাছের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দেখা যায়।


৯. পাংথুমাই জলপ্রপাত – সিলেটের এক অদেখা সৌন্দর্য

পাংথুমাই জলপ্রপাত সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি রহস্যময় স্থান। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং এখানে উঁচু পাহাড় থেকে ঝরনা পড়ার দৃশ্য খুবই সুন্দর।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে জৈন্তাপুর ও পাংথুমাই গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয়, স্থানীয় গাইডের সাহায্য নেওয়া ভালো।

সেরা সময়:

বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) যখন ঝরনার পানি বেশি থাকে। শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করা যায়।



১০. টাঙ্গুয়ার হাওর – বাংলাদেশের স্বর্গীয় জলাভূমি

সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর সিলেট বিভাগের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় জলাভূমি। এখানে অসংখ্য পাখি, মাছ, জলজ প্রাণী এবং বন্যপ্রাণী দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন:

সুনামগঞ্জ শহর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে সিএনজি, মাইক্রোবাস বা বাসে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করতে হয়।

সেরা সময়:

বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) হাওরের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায়। শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি)ও উপযুক্ত, বিশেষত পাখি দেখতে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য।



নবীনতর পূর্বতন