![]() |
ছবি : সংগ্রহকৃত |
হামজা চৌধুরীর যোগদানের পর থেকেই বাংলাদেশ দলের লড়াই করার মানসিকতায় এসেছে বড় পরিবর্তন। মাঠে তার উপস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রভাব ফেলেছে দলের খেলায়। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই বাংলাদেশের আক্রমণের ঝড় শুরু হয়। প্রথম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গোল করার সুযোগ আসে, যখন ভারতের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ ভুল করে বল তুলে দেন মজিবুর রহমান জনির সামনে। কিন্তু জনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, ফাঁকা পোস্ট পেয়েও তার শট চলে যায় বাইরে।
নবম মিনিটে শেখ মোরসালিনের ক্রসে শাহরিয়ার ইমন হেড নিলেও তা পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। আর ১৫তম মিনিটে তো অবিশ্বাস্য এক সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ! হামজা চৌধুরীর কর্নার কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে কাইথ বল তুলে দেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সামনেই, কিন্তু মোহাম্মদ হৃদয়ের দুর্বল শট গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন শুভাশীষ বোস।
এরপরও আক্রমণের ধার অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ। ২৩তম মিনিটে মোরসালিনের নিখুঁত ক্রস পেয়ে ইমন একদম ফাঁকা অবস্থায় থেকেও ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি! পুরো গ্যালারি তখন হতাশায় মুখ চেপে ধরেছে।
এরপরই ঘটে বড় ধাক্কা— ২১তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক তপু বর্মণকে। তার জায়গায় মাঠে নামেন রহমত মিয়া।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ভারত খেলার ছন্দ খুঁজে পেতে শুরু করে। ২৭তম মিনিটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পোস্টে শট নেয় তারা, যা সহজেই ধরে ফেলেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। এরপর ৩১তম মিনিটে ভারতের উদন্ত সিং ও ফারুখ চৌধুরীর দুই দফা শটও চমৎকার দক্ষতায় রুখে দেন তিনি।
৪১তম মিনিটে আবারও গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। জনি গতিতে প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলে একদম বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন, সামনে শুধু গোলরক্ষক! কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শটই নিতে পারলেন না! গ্যালারিতে তখন হতাশার শ্বাস।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারত ফিরে আসে, কিন্তু বাংলাদেশও কম যায়নি
বিরতির পর ভারত প্রেসিং ফুটবলের মাধ্যমে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ আসে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই। ৫১ মিনিটে রাকিব হোসেন ভারতের বক্সে ঢুকে শট নিলেও বল চলে যায় গোলপোস্টের বাইরে।
এরপর ৫৪ মিনিটে ভারত আক্রমণে যায়। লিস্টন কোলচাওয়ের ক্রসে বিভ্রান্ত হন গোলরক্ষক মিতুল মারমা, কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণের দুর্দান্ত প্রচেষ্টায় সুনীল ছেত্রী হেড নিতে পারেননি। অবসর ভেঙে ফেরা ভারতীয় স্ট্রাইকারের জন্য সেটি ছিল হতাশার মুহূর্ত।
বাংলাদেশের হয়ে ৬১ মিনিটে আরেকটি বড় সুযোগ পান জনি। তবে বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। এর পরপরই ভারতীয় ফরোয়ার্ডরা চাপ বাড়াতে শুরু করেন। ৭০ মিনিটের পর ফারুখ চৌধুরী ও শুভাশীষ বোস মুহুর্মূহু আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখেন।
৭১ মিনিটে ফারুখের জোরালো শট স্লাইড করে আটকে দেন সাদ উদ্দিন ও মোহাম্মদ হৃদয়। এর ফলে কর্নার পায় ভারত, কিন্তু ৭২ মিনিটে লিস্টনের নেওয়া কর্নার থেকে শুভাশীষের হেড গোলপোস্টের বাইরে চলে যায়।
বাংলাদেশও সুযোগ তৈরি করছিল। ৭৪ মিনিটে রাকিবের ক্রস থেকে বদলি খেলোয়াড় ফাহিম ফয়সাল শট নেওয়ার চেষ্টা করলেও সঠিকভাবে ফিনিশিং করতে পারেননি। তবে ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ৮৯ মিনিটে ফাহিমের দুর্দান্ত শট রুখে দেন ভারতের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ।
এর আগে ৮৩ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ছেত্রী, কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হন তিনিও। ফলে দুই দলই গোলশূন্য ড্রতে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়।
ফিনিশিংয়ের অভাবে জয় হাতছাড়া
বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। বল দখল, পাসিং, আক্রমণ—সব ক্ষেত্রেই তারা ভারতকে চাপে রেখেছিল। তবে ফিনিশিং দুর্বল হওয়ায় ম্যাচটি জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।
তবে একদিকে হতাশা থাকলেও, অন্যদিকে আশার আলো জ্বলছে। এই দলটি যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দলগুলোর চেয়ে ভালো খেলছে, তা আবারও প্রমাণিত হলো। এখন শুধু দরকার ফিনিশিং শাণিত করা। যদি সেটি করা যায়, তাহলে এশিয়ার ফুটবলে নতুন এক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বাংলাদেশ।