বিশ্বনাথ থানায় কিস্তিতে ঘুষের কারবার, এসআই আলীমের ভিডিও ফাঁস!


বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:

সিলেটের বিশ্বনাথ থানার এক সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে কিস্তিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মামলার ধারা বাদ দেওয়া, দূর্বল চার্জশিট প্রদান ও আসামি গ্রেপ্তার না করার বিনিময়ে তিনি লক্ষাধিক টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত এই সাব-ইন্সপেক্টর হলেন মো. আলীম উদ্দিন (বিপি-৭৫৯৪০৪৫২৬৩)।

ঘুষ নেওয়ার পরও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না করায় সমস্যা দেখা দেয়। টাকা ফেরত চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে ভুক্তভোগী আগেই সন্দেহ করে ঘুষ লেনদেনের দুটি কিস্তির ভিডিও গোপনে ধারণ করে রাখেন। ভিডিওতে দেখা যায়, থানার বৈঠকখানায় বসে সাব-ইন্সপেক্টর আলীম উদ্দিন ঘুষের টাকা গুনে নিয়ে হাসিমুখে পকেটে রাখছেন। এক ভিডিওতে তাকে চার্জশিটের জন্য পুরো ২০ হাজার টাকা দাবি করতেও শোনা যায়, আরেক ভিডিওতে মামলার মেডিকেল সার্টিফিকেটের (এমসি) জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে দর-কষাকষি করতে দেখা যায়।

২০২৪ সালের ২০ আগস্ট বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের আনপুর গ্রামে পূর্ব বিরোধের জেরে সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল আলী প্রতিপক্ষ জুনেদ গংদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (এফআইআর নম্বর-২০, তারিখ: ২৮.০৮.২০২৪)। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার পান এসআই মো. আলীম উদ্দিন।

এদিকে, আসামিপক্ষ মামলার দেখভালের জন্য উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মৃত আবদুস সালামের ছেলে ফয়সল আহমদকে দায়িত্ব দেয়। তিনি আইনি পরামর্শ নিতে এসআই আলীম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্রমেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, এবং একপর্যায়ে এসআই আলীম তাকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে এর বিনিময়ে পৃথকভাবে ঘুষ দাবি করেন।

ফয়সল আহমদের অভিযোগ, সাব-ইন্সপেক্টর আলীম উদ্দিন চার্জশিট দুর্বল করার, মামলার ধারা পরিবর্তন করার এবং আসামি না ধরার শর্তে ২০ হাজার টাকা করে চার কিস্তিতে এবং ১০ হাজার টাকা করে দুই কিস্তিতে মোট এক লাখ টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না করায় ফয়সল টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।

ফয়সল আহমদ বলেন, "সরলতার সুযোগ নিয়ে দারোগা আলীম আমাকে প্রতারণা করেছেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আমার সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। টাকা নেওয়ার পরও আমাদের হয়রানি করেছেন। সন্দেহ হওয়ায় আমি ঘুষ লেনদেনের দুটি ভিডিও ধারণ করে রাখি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না করায় টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমাকে হুমকি দেন। শীঘ্রই আমি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চাইবো।"

এই বিষয়ে জানতে সাব-ইন্সপেক্টর আলীম উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে আর ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, "আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। আগে তদন্ত করে দেখি, অভিযোগ সত্য হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

নবীনতর পূর্বতন