গ্রামের নাম শুনলেই মনে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ফসলের খেত আর সাদাসিধে জীবনযাত্রার ছবি। তবে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের শ্রীমুখ গ্রাম এসব ধ্যানধারণা থেকে একেবারে আলাদা। মাত্র ৬০ শতক আয়তনের এই গ্রামে বাস করে একটি মাত্র পরিবার। জনসংখ্যা মাত্র ছয়জন। রাস্তাঘাট কিংবা বাজার নেই, তবু এই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে।
গ্রামের একমাত্র পরিবারটি হলো আপ্তাব আলীর পরিবার। আপ্তাব আলী বর্তমানে সৌদি আরবে কাজ করেন। গ্রামে রয়েছেন তার স্ত্রী, এক সন্তান, দুই বোন ও এক ভাতিজি। ছোট্ট এই গ্রামটির ইতিহাসও বেশ পুরনো। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, শ্রীমুখ একসময় একটি হিন্দু পরিবারের বসতি ছিল। ১৯৬৪ সালে সেই পরিবার ভারতে চলে যাওয়ার পর আপ্তাব আলীর দাদার কাছে জমি ও বাড়ি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে, এটি আপ্তাব আলীর মালিকানায় আসে।
গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানে কোনো রাস্তা নেই। বর্ষায় কাদার মধ্য দিয়ে কিংবা শীতকালে আলপথ ধরে চলাচল করতে হয়। তবে এমন প্রতিকূলতার পরেও শ্রীমুখ গ্রামটি স্থানীয় মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে শ্রীমুখকে স্বীকৃতি দিতে এখনো কোনো সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল এ গ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তার মতে, গ্রামটির ছোট আকার ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য এটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করতে পারে।
শ্রীমুখের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। যদি শ্রীমুখ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তবে এটি কেবল সিলেট নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার খুলবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শ্রীমুখ কি ভবিষ্যতে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেবে? সময়ই এর সঠিক উত্তর দেবে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই ছোট্ট গ্রামটি তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিতে প্রস্তুত।