ক্রিকেট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়া একপ্রকার বাধা হয়ে দাঁড়ায় যখনই কোনো দল শিরোপার স্বপ্ন দেখে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হার, সেই হতাশার স্মৃতি এখনও টাটকা। তবে এবার দুবাইয়ের আকাশে ভারতের জয়ের আলো ফুটল। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে জায়গা করে নিল রোহিত শর্মার দল।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি তাদের। ইনজুরির কারণে শেষ মুহূর্তে দলে সুযোগ পাওয়া ওপেনার কুপার কনলি শূন্য রানে ফিরে যান, দলের স্কোর তখন মাত্র ৪। এরপর ট্রাভিস হেড ঝড় তুললেও (৩৯ রান), বেশি সময় টিকতে পারেননি। মাত্র ৫৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অজিরা।
এরপর স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানে ১১০ পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে গেলেও ভারতের স্পিন-ফাস্ট বোলিং কম্বিনেশন তাদের চাপে ফেলে দেয়। ৩৬ বলে ২৯ রান করে লাবুশানে ফিরলে ম্যাচের গতি আবার ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। স্মিথ অবশ্য দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেছিলেন, ৯৬ বলে ৭৩ রান করে মোহাম্মদ শামির ফুলটসে বোল্ড হন। আর তার বিদায়ের পর যেন ধ্বস নামে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনআপে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল মাত্র ৬ রান করেই ফেরেন, কেরি ৫৭ বলে ৬১ রান করলেও রান আউট হয়ে গেলে তাদের বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত, ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের পক্ষে মোহাম্মদ শামি ৪৮ রানে ৩ উইকেট, বরুণ চক্রবর্তী ৪৯ রানে ২ উইকেট ও রবীন্দ্র জাদেজা ৪০ রানে ২ উইকেট নেন।
২৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতও শুরুতে ধাক্কা খায়। শুভমন গিল মাত্র ৮ রান করে আউট হন, অধিনায়ক রোহিত শর্মাও ২৯ বলে ২৮ রান করে ফিরে যান। তবে তারপর আসে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের ৯১ রানের পার্টনারশিপ, যা ভারতের ইনিংসের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়।
শ্রেয়াস আইয়ার ৪৫ রানে ফিরে গেলেও কোহলি তখনো শক্ত হাতে ইনিংস ধরে রেখেছিলেন। অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে তার জুটি যোগ করে ৪৪ রান। অক্ষর ৩০ বলে ২৭ রান করে ফিরলে আবার চাপ বাড়ে ভারতের ওপর। এরপর কেএল রাহুল ও কোহলি ৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের একদম কাছে নিয়ে যান।
কিন্তু কোহলি যখন ৯৮ বলে ৮৪ রান করে আউট হন, তখন ম্যাচে সামান্য রোমাঞ্চ যোগ হয়। শেষদিকে হার্ডিক পান্ডিয়া (২৪ বলে ২৮) ও কেএল রাহুল (৩৪ বলে ৪২*) দলের জয় নিশ্চিত করেন ১১ বল বাকি থাকতে।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নাথান এলিস ও অ্যাডাম জাম্পা দুটি করে উইকেট নেন, তবে ভারতের ব্যাটিং শক্তির সামনে তাদের পারফরম্যান্স যথেষ্ট হয়নি।
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত আরও একবার প্রমাণ করল, তারা যখন ছন্দে থাকে, তখন যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। ফাইনালে প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, কোহলি-রোহিতদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। এবার কি ভারতের হাতে উঠবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা? ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়ে আছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে!