কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখার সঠিক উপায়: জানুন চিকিৎসকের পরামর্শ

কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখার সঠিক উপায়: চিকিৎসকের পরামর্শ
কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কারণ তাদের শারীরিক অবস্থা রোজা রাখার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তবে, যদি কিডনি রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু সতর্কতা মেনে চলা হয়, তবে তারা রোজা রাখতে পারেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান কিডনি রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। চলুন, জেনে নিই কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখা কতটুকু নিরাপদ এবং কীভাবে সঠিকভাবে রোজা রাখার প্রস্তুতি নিতে হবে।

কোন কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারেন?

কিডনি রোগের ধরন ও অবস্থা অনুযায়ী কিছু রোগী রোজা রাখতে পারেন, আবার কিছু রোগী রোজা রাখার জন্য উপযুক্ত নন। নিচে উল্লেখ করা হলো কোন ধরনের কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারেন:

১. কিডনি পাথর: যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে, তারা সাধারণত রোজা রাখতে পারেন। পাথর অপসারণের পর তাদের শরীরের অবস্থা আগের মতো হয়ে যায়, এবং রোজা রাখা তাদের জন্য ক্ষতিকর নয়।

২. কিডনি ইনফেকশন: কিডনির সংক্রমণ থাকলে, যদি রোগী ১২ ঘণ্টায় একবার অথবা একক ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন, তবে তিনি রোজা রাখতে পারবেন। তবে, এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩. একিউট রেনাল ফেইলিউর: একিউট রেনাল ফেইলিউর যদি সেরে যায় এবং কিডনি পুনরায় কার্যক্ষম হয়, তবে এই অবস্থায় রোজা রাখা সম্ভব।

৪. ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD): CKD-এর প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের রোগীরা রোজা রাখতে পারেন, তবে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের রোগীদের জন্য রোজা রাখা নিষেধ, কারণ তাদের কিডনি কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় এবং রোজা রাখলে শরীরে পানির অভাব হতে পারে।

কিডনি রোগীদের রোজা রাখার সময় কিছু সতর্কতা:

কিডনি রোগীদের রোজা রাখার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়, যেগুলো তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে:

১. প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণ সীমিত করুন: কিডনি রোগীদের মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সীমিত পরিমাণে খেতে বলা হয়।

২. ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন: স্বাস্থ্যকর এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩. সঠিক ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ: যেমন আপেল, পেয়ারা, এগুলো কিডনির জন্য উপকারী এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ কম।

৪. ওষুধের নিয়মিত খাওয়ার ব্যবস্থা: যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাদের সেহেরি ও ইফতারির পর চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

৫. ডায়ালাইসিসের রোগীরা: যারা ডায়ালাইসিস করান, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারেন। তবে, ডায়ালাইসিসের সময় ছাড়া অন্য সময় রোজা রাখা নিরাপদ হতে পারে।

৬. বিশ্রাম ও পরিশ্রমের বিষয়: অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং শরীরের ঘাম ঝরা কাজ থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

রোজা রাখার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক:

কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি রোগের অবস্থা বুঝে চিকিৎসক আপনাকে বলবেন আপনি রোজা রাখতে পারবেন কি না এবং কীভাবে নিরাপদভাবে রোজা রাখবেন।

কিডনি রোগীদের জন্য রোজা রাখা ইসলামী বিধান অনুযায়ী হলেও, তাদের শারীরিক অবস্থা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে তারা নিরাপদভাবে রোজা রাখতে পারেন, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সকল কিডনি রোগীকে তাদের শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে

নবীনতর পূর্বতন