মুশফিকুর রহিমের ওয়ানডে থেকে অবসর: শেষ হলো এক যুগের অধ্যায়

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই লড়াকু ক্রিকেটার বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তায় তার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে টেস্ট ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে মুশফিক হয়ে ওঠেন দলের অন্যতম ভরসা। ২৭৪ ম্যাচে ৭,৭৯৫ রান, ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি ফিফটির অনবদ্য পরিসংখ্যান তার ধারাবাহিকতার প্রমাণ। তবে মুশফিককে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যাবে না। তার প্রতিটি ইনিংসে, প্রতিটি বলের বিপরীতে লড়াই করার মানসিকতাই তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা করে তুলেছে।

বাংলাদেশের অনেক ঐতিহাসিক জয়ের নেপথ্য নায়ক তিনি। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় কিংবা নানা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে মুশফিক ছিলেন অগ্রগামী। ব্যাটিং দক্ষতার পাশাপাশি উইকেটকিপার হিসেবে তার সরব উপস্থিতি দলকে অনুপ্রাণিত করত।

সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে, ২০২৭ বিশ্বকাপকে ঘিরে বিসিবির নতুন পরিকল্পনায় মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর জায়গা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। হয়তো সেই বাস্তবতা মেনে নিয়েই নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন মুশফিক।

তার বিদায়ী বার্তায় ছিল আবেগের ছোঁয়া—

"বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন কম। তারপরও যখনই মাঠে নেমেছি, শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। গেল কিছুদিন আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং আমি অনুধাবন করেছি যে, এটাই আমার ভাগ্যে লেখা আছে।"

যদিও ওয়ানডে থেকে বিদায় নিয়েছেন, মুশফিক টেস্ট ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লাল বলের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি দলের জন্য এখনও মূল্যবান।

মুশফিকুর রহিম শুধু একজন ব্যাটসম্যান নন, তিনি ছিলেন দলের প্রাণশক্তি। তার চোয়ালবদ্ধ সংকল্প, দারুণ স্ট্রোকপ্লে, উইকেটের পেছনে নিরলস প্রচেষ্টা— সবই তাকে বিশেষ করে তুলেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার অভাব অনুভূত হবে, তবে তার অবদান স্মৃতির পাতায় চিরকাল অমলিন থাকবে।

বিদায়, মুশফিক! বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তুমি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তোমার আত্মত্যাগ, পরিশ্রম ও লড়াকু মানসিকতার জন্য।

নবীনতর পূর্বতন