এই ঘোষণার মাধ্যমে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতীয় দলের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অবসরের ঘোষণা দিলেন তিনি। এর আগে, গত বুধবার ওয়ানডে থেকে অবসরের কথা জানান মুশফিকুর রহিম। দুজনই ছিলেন দলের অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। তাদের বিদায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক যুগের সমাপ্তি ঘটলো।
২০০৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় মাহমুদউল্লাহর। এরপর থেকে তিনি ধাপে ধাপে হয়ে ওঠেন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার অলরাউন্ড দক্ষতা, বিশেষ করে ম্যাচ ফিনিশিংয়ের সামর্থ্য, তাকে ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক ঐতিহাসিক জয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিকে তিনি আগেই বিদায় বলেছেন। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্ট খেলে সাদা পোশাকের অধ্যায় শেষ করেন। এরপর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ থেকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন। সর্বশেষ, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেন।
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৩০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। মুশফিকুর রহিম (৪৭০) ও সাকিব আল হাসানের (৪৪৭) পর তিনি দেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার। ২৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচে তার নামের পাশে রয়েছে অনেক স্মরণীয় ইনিংস, যার মধ্যে বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি অন্যতম।
গত কয়েক মাস ধরেই তার অবসর নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে, ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময়ই গুঞ্জন শুরু হয়। যদিও তখন তিনি এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে গত ১০ মার্চ বিসিবি যখন ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ করে, তখন জানা যায় যে মাহমুদউল্লাহ নিজেই চুক্তিতে না থাকার অনুরোধ করেছেন। এর দুই দিন পর, অবশেষে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন।
একজন শান্ত, পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল ক্রিকেটার হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বরাবরই ভক্তদের প্রিয় ছিলেন। তার বিদায় দলের মিডল অর্ডারে বড় শূন্যতা তৈরি করবে। কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তার অবসর ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, তার অভিজ্ঞতা ও ম্যাচ ফিনিশিং দক্ষতার অভাব সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। কিন্তু তার অবদান ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আজীবন থাকবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, খেলার মাঠে ঠাণ্ডা মাথার একজন খেলোয়াড়ও দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন।