প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত ! ভারতের বিপক্ষে কতটা সফল ছিলেন সিলেটের হামজা চৌধুরী?

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করছেন | Bangladesh vs India Football | Hamza Chowdhury Debut
ছবি : সংগ্রহকৃত

উবেদুল্লাহ তালুকদার : ২৫ মার্চ, শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম। বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাসের সূচনা। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবার মাঠে নামলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। চারপাশে উত্তেজনা, প্রত্যাশার চাপ, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। কিন্তু এই তরুণ মিডফিল্ডার যেন কোনো কিছুতেই বিচলিত নন। বরং শুরু থেকেই দেখিয়ে দিলেন, কেন তাকে নিয়ে এত আলোচনা, কেন তিনি হতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন সেনাপতি।

ম্যাচ শুরুর বাঁশিতেই চমক

ম্যাচের প্রথম বাঁশিতেই নিজের আগমনী বার্তা জানান দিলেন হামজা। ইমন থেকে পাওয়া বলটিকে পেছনে এক পা সরিয়ে নিখুঁতভাবে ফরোয়ার্ডের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। ডিফেন্সচেরা সেই বল থেকে গোলের সম্ভাবনা তৈরি হলেও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেনি। মাত্র ১০ সেকেন্ডেই বোঝা গেল, মিডফিল্ডে আজ এক নতুন রাজত্ব কায়েম করতে এসেছেন তিনি।

মিডফিল্ডে রাজত্ব, ডিফেন্সেও নির্ভরযোগ্যতা

৪ মিনিটেই প্রথমবার ভারতীয় মিডফিল্ডারদের চমকে দিলেন তিনি। বল কেড়ে নিয়ে সামনে বাড়ালেন, তৈরি হলো সুযোগ। এরপর ১১ মিনিটে তার নেওয়া কর্নার থেকে হৃদয় সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না।

বিরতির পর যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠলেন হামজা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১০ মিনিটে বলতে গেলে "হামজা বনাম ভারতীয় আক্রমণ" হয়ে দাঁড়ায় ম্যাচটি। ৪৭ মিনিটে ভারতের বিপজ্জনক আক্রমণ আটকালেন একাই। তবে সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত আসে ৫৭ মিনিটে, যখন ভারতের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীর হেড তিনি কাঁধ দিয়ে ফিরিয়ে দেন! গোললাইন সেভের এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত বাংলাদেশ ফুটবল, তবে অভিষেক ম্যাচে এমন দৃঢ়তা সত্যিই দুর্দান্ত!

বাংলাদেশের নতুন নির্ভরতা?

প্রয়োজনে নিচে নেমে প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামিয়েছেন, আবার আক্রমণে যোগ দিয়ে তৈরি করেছেন সুযোগ। একাধিকবার এরিয়াল ডুয়েলে জয়ী হয়েছেন, যা বাংলাদেশ দলের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলেও, বাংলাদেশ কোনোভাবেই পিছিয়ে ছিল না। বরং ভারতকে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে, আর সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন অভিষিক্ত হামজা চৌধুরী।

হামজার আগমন, দেশের পাড়ায় মহল্লায় ফুটবল উন্মাদনা

তবে মাঠে তার পারফরম্যান্সের পাশাপাশি, দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, শহরের অলিতে গলিতে এক ফুটবল উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। সিলেটের অলিতে গলিতে, প্রতিটি বাড়ির জানালায়, মোবাইল স্ক্রীনে বাংলাদেশের হাজার হাজার ফুটবলভক্ত তার খেলা দেখেছেন, যা আগে কখনো বাংলাদেশের ফুটবল ম্যাচে অন্তত দেখা যায়নি। বড় পর্দায় ফুটবল দেখার এমন উন্মাদনা, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করেছে।

এক নতুন স্বপ্নের সূচনা

এই ম্যাচের পর বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন—এই পারফরম্যান্স কি এক ম্যাচের ঝলক, নাকি সত্যিই হামজা বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন স্তম্ভ হয়ে উঠছেন? সময়ই হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে। তবে শিলংয়ের মাটিতে তার পারফরম্যান্স দেখে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, বাংলাদেশের হয়ে এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ!

হয়তো এই ম্যাচ থেকেই শুরু হলো নতুন এক অধ্যায়—যেখানে বাংলাদেশের মিডফিল্ডে থাকবে এক বিশ্বমানের সেনানায়ক, যার নাম হামজা দেওয়ান চৌধুরী।

নবীনতর পূর্বতন