ঢাবির সাবেক অধ্যাপক জকিগঞ্জের প্রফেসর ড. মুহিবুর রহমানের ইন্তেকাল


জকিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
জকিগঞ্জের কৃতি সন্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মহিবুর রহমান আজ (রবিবার) সকাল ৭টার সময় ঢাকা ইউনাইটেড হসপিটালে ইন্তেকাল করিয়াছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও চার কন্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। মরহুমকে আজ বাদ জোহর ঢাকার বনানীতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। 

অধ্যাপক ড. মুহিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০১০ সালের ৩০ জুন অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের আগষ্ট মাস থেকে তিনি অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভ করেছিলেন। তাঁর রাসায়নিক বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য রচিত " উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন" নামের একটি পাঠ্য বইও রয়েছে। 

জকিগঞ্জ ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামে ১৯৪৪ সালের ২ জানুয়ারী মোঃ মুহিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাজী মমতাজ আলী তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ডাক বিভাগে চাকুরী করেন এবং পোষ্টমাস্টার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। 

সুদীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপক ড. মুহিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রায় একশত জন ছাত্র/ছাত্রী গবেষণা করে এম এস সি, এম ফিল এবং পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেছেন। এদের অনেকেই এখন দেশে এবং বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন।

বিজ্ঞান চর্চার সংগঠক হিসেবে অধ্যাপক মুহিবুর রহমান বাংলাদেশে অনেক অবদান রেখেছেন। দেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান সমিতি 'বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি'র প্রেসিডেন্ট হিসেবে (২০০৭-২০১০) তিনি বাংলাদেশের রসায়ন চর্চাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। এ ছাড়া তাঁর নেতত্বে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রতি বৎসর রসায়ন অলিম্পিয়াডের আয়োজন শুরু হয়। তিনি এসোসিয়েশন অব হুমবোল্ডট ফেলোজ বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন এবং ২০০৩-২০১০ সময়কালে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে জার্মানীর সাথে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতামূলক গবেষণা কর্ম প্রসার লাভ করে। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলনে যোগদানের মাধ্যমে অধ্যাপক মুহিবুর রহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করে অধ্যাপক মুহিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও সহকর্মীদের সাথে গবেষণা কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যাপক মুহিবুর রহমান চার কন্যার জনক। স্ত্রী শামীম রহমান ইংরেজীতে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী এবং বেসরকারী কলেজ এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। বড় মেয়ে লুনা নাসরিন কানাডার গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ-রসায়ন বিষয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রীর জন্য অধ্যয়ন করছেন। মেজো মেয়ে ফিয়োনা কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস ডিগ্রী লাভ করে এখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। দুই যমজ মেয়ে মনিকা এবং আনিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ফার্মেসী এবং প্রাণ-রসায়ন বিসয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রীর জন্য অধ্যয়ন করছে।

এদিকে তার ইন্তেকালে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জকিগঞ্জ লেখক পরিষদের সভাপতি লন্ডন প্রবাসী মাওলানা আবদুল আউয়াল হেলাল, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ফদ্বলুর রহমান মানিকপুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক জুবায়ের আহমদ, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মুফিকুল হক সহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। 
নবীনতর পূর্বতন