বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন আলো হামজা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটির এই তারকা মিডফিল্ডার যখন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়, তখনই বড় এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ফুটবল দল। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া সুনীল ছেত্রীকে আবারও দলে ফিরিয়ে এনেছে তারা!
কেউ কেউ বলছেন, হামজার ভয়ে কাঁপছে ভারত! বাংলাদেশ দলে হামজার অন্তর্ভুক্তির খবরে ভারতের কোচ মানোলো মার্কেজ হয়তো বুঝতে পারছেন, বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না। আর তাই, অভিজ্ঞতা আর অভ্যস্ত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনতেই ভারত ৪০ বছর বয়সী ছেত্রীকে আবারও দলে যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বছরের ৬ জুন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছেত্রী। কিন্তু মাত্র ৮ মাস পর আবারও ফিরছেন তিনি। এভাবে অবসরের পর এত দ্রুত ফিরে আসার ঘটনা আন্তর্জাতিক ফুটবলে খুব কমই দেখা যায়।
ভারতের কোচ মানোলো মার্কেজ বলেছেন, "এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দলকে শক্তিশালী করতে আমি ছেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আর সে রাজি হওয়ায় আমরা তাকে স্কোয়াডে রেখেছি।" ছেত্রীকে ফেরানোর মূল কারণই হলো ২৫ মার্চের বাংলাদেশ ম্যাচ। ভারতের পরিকল্পনায় স্পষ্ট—বাংলাদেশকে রুখতে হলে তাদের সেরা অস্ত্র প্রয়োজন, আর সেই অস্ত্রই হলো সুনীল ছেত্রী।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, ছেত্রীর ফেরার মূল কারণ কি আসলেই ভারতের দলের শক্তি বাড়ানো, নাকি বাংলাদেশ দলের প্রতি একধরনের সতর্কবার্তা?
অন্যদিকে, বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর হলো হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি। ১৭ মার্চ ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি সিলেটে পৌঁছাবেন তিনি। একদিনের জন্য নিজের পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জে গিয়ে ১৮ মার্চ ঢাকায় জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বেশ কিছুদিন ধরেই তার আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনকি, তার স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গী করে আসার জন্য বিজনেস ক্লাস টিকিটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া, সিলেটে তার নিরাপত্তা ও অভ্যর্থনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হামজা শুধু ইংল্যান্ডের একজন খেলোয়াড় নন, তিনি প্রিমিয়ার লিগে খেলা প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার। তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের মিডফিল্ডকে নতুন মাত্রা দেবে, যা ভারতের জন্য হতে পারে বড় মাথাব্যথার কারণ। মিডফিল্ডে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখতে তিনি বিশ্বমানের খেলোয়াড়, যা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয় দল ইতোমধ্যে সৌদি আরবে প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে। সেখানে সুদানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্যাম্প শেষে ১৭ মার্চ রাতে দেশে ফিরবেন ফুটবলাররা এবং পরদিন ১৮ মার্চ ঢাকায় অনুশীলনে যোগ দেবেন হামজা।
এই খবর কি ভারতের শিবিরে পৌঁছেনি? হয়তো পৌঁছেছে বলেই আত্মবিশ্বাসহীন ভারত হঠাৎ ছেত্রীকে ফিরিয়ে আনল! বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা হয়তো ইতোমধ্যে পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছিলেন ছেত্রীবিহীন ভারতের জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারতীয় দলে এই পরিবর্তন বাংলাদেশকে নতুন করে কৌশল সাজাতে বাধ্য করছে।
২৫ মার্চের ম্যাচটি হবে ভারতের শিলংয়ে। স্বাগতিক দল হিসেবে ভারত মাঠের সুবিধা পাবে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ দলও আত্মবিশ্বাসী। হামজা, বিপলু, রবিউল, ফাহাদদের গতি আর কৌশল ভারতের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের রক্ষণভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ। যদি হামজা ও তার সতীর্থরা বলের দখল নিজেদের হাতে রাখতে পারেন, তাহলে ভারতের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। আর এই কারণেই ভারত ছেত্রীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
বাংলাদেশের মিডফিল্ডে এবার নতুন চমক, হামজা চৌধুরী! ভারতের ছেত্রী ফিরে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের শক্তিও বেড়েছে বহুগুণ।
এখন প্রশ্ন একটাই—ভারতের সুনীল ছেত্রী নাকি বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী, শিলংয়ের ম্যাচে শেষ হাসি কে হাসবে?
২৫ মার্চের মহারণই বলে দেবে, ভারতের অভিজ্ঞতাই পার্থক্য গড়ে দেবে, নাকি বাংলাদেশের নতুন তারকার আগমনে ইতিহাস বদলে যাবে!