সোস্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে শিবিরের কর্মীরা
জকিগঞ্জ প্রতিনিধি :: জকিগঞ্জের ফুলতলী ছাহেব বাড়ীতে দারুল কিরাতে পড়তে আসা এক ছাত্রের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২ টার দিকে ফুলতলী কামিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের পুকুরে গোসল করতে গেলে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্র মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইলাশপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (১৮)। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকালে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার ইফতারের পরে নিহতের গ্রামের বাড়ীতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ)-এর সুযোগ্য নাতি মাওলানা রেদ্বওয়ান আহমদ চৌধুরী। জানাযায় মরহুমের আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় তালামীয, আল-ইসলাহ ও ক্বারী সোসাইটির দায়িত্বশীল সহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে।
যেভাবে এই দূর্ঘটনা ঘটে : এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিয়াজের মরদেহ ফুলতলী ছাহেব বাড়ীর মাদরাসার পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি দারুল কিরাতের ছাদিছ জামায়াতের ছাত্র ছিলেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ইফতারের সময় রিয়াজের খোঁজ পড়ে, কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ইফতারের পর সহপাঠীরা দেখতে পান তার কাপড় ও সাবানদানী মাদরাসার ছাত্রাবাসের পুকুরঘাটে পড়ে রয়েছে। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখতে পান দুপুরে রিয়াজ কয়েকজনের সঙ্গে গোসলে নেমেছিলো।
পরে তার সহপাঠী ও স্থানীয়রা তৎপরতা চালিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
রাত ১২টার দিকে রিয়াজের পরিবারের সদস্যরা ফুলতলী ছাহেব বাড়ীতে যান। তবে তাদের কোনো অভিযোগ না থাকায় থানায় নিয়মিত অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে পুলিশের পরামর্শে ময়না তদন্তের জন্য লাশ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকালে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরা করা হয়েছে।
সোস্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ায় : এরকম মৃত্যুতে মৃগীরোগের প্রশ্ন করা অতি স্বাভাবিত। প্রাথমিকভাবে মৃত ছাত্র মৃগীরোগী কিনা এই প্রশ্ন করা হলে সহপাঠীরা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দেন। দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের সহকারী নাজিম মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী রায়হান মৃগী রোগী বিষয় উল্লেখ করে ফেসবুকে শোকবার্তা দেন।পরবর্তীতে পরিবাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান মৃত ছাত্র মৃগীরোগী ছিলেন না, তবে সাঁতার জানতেন না। সামান্য এই গরমিলের সুযোগ নেন মৌলভীবাজারের শিবির নেতা মাসুম। লাশ জকিগঞ্জে থাকা অবস্থায় মৃতের বাড়িতে গিয়ে লাইভ করে এটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। রাত দুইটার দিকে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক বদরুল আলম মৃত রিয়াজের পিতা তাজ উদ্দিন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুলতলীতে পৌঁছান। সিসিটিভি ফুটেজ ও লাশের শরীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হন পানিতে ডুবেই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ছাত্রের পিতা তাজ উদ্দিন ময়নাতদন্ত ছাড়া তার পুত্রের লাশ নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি ফুলতলীতে প্রথম জানাযা ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু শিবির নেতা মাসুমের লাইভে অনলাইনে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বিনা ময়না তদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ প্রশাসন। সুরতহাল শেষে জকিগঞ্জ থানায় লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেটে স্থানান্তার করা হয়। এর আগে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক বদরুল আলম মৃত রিয়াজের পিতা তাজ উদ্দিন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দেন। স্বাভাবিক মৃত্যুর হওয়ার ব্যাপারে তাদের নিশ্চয়তার কথা জানান। পাশাপাশি সিলেট জুড়ে শিবির কর্মীদের অপপ্রচার বন্ধ করার আহ্বান করেন। শুক্রবার বিকাল তিনটার পর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ময়নানতদন্ত শেষ হলে লাশ মৌলভীবাজার জেলার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্য পাঠানো হয়।
এদিকে মৃত রিয়াজের অভিভাবক জেলা জামায়াত নেতার বক্তব্যে শিবির কর্মীদের মিথ্যাচার স্পষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিবির কর্মীরা। সিলেটের এমসি কলেজের হামলার ঘটনার মতো জামায়াতকে গালমন্দ শুরু করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির আবারো মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে।
রিয়াজের অভিভাবকদের বক্তব্য : এদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, একটি কুচক্রি মহল এই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। রিয়াজ শিবিরকর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়া মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক বলেও গুজব ছড়াচ্ছে এই চক্র।
বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রিয়াজের বাবা মো. তাজ উদ্দিন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাদের পাশের বাড়ির শফিকুর রহমান নামে একজন বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন যে, আমার ছেলে নাকি শিবিরকর্মী। মূলত: তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন কারেণ শত্রুতা করে আসছেন। সেই সূত্র ধরে হিংসা চরিতার্থ করতেই তিনি এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি আমাদের নিকটজন কেউ না। তার এমন বক্তব্য দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। আমার ছেলের মৃত্যু একটা দুর্ঘটনাই। আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের শাস্তি দাবি করছি।
জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন,লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃত্যু নিয়ে পরিবারেরও কোনো অভিযোগ নেই।