নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের এমসি কলেজে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মি ও তালামীযে ইসলামিয়ার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান রিয়াদকে ছাত্রাবাসে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার দায় স্বীকার করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং অভিযুক্ত ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছে। একই সাথে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তীক্ষ্ণতা ও সম্পর্কের ভাঙন না ধরানোর আহবান জানিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াতের সাথে আনজুমানে আল ইসলাহ নেতাদের সাতে বৈঠকে পর জেলা জামায়াতের আমীর ও আমীরে জামায়াতের ছোটভাই মাওলানা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের মাধ্যমে এক বিবৃতি এ আহবান জানান। সিলেট শহরের এ বৈঠকে ঘটনার জন্য যাতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ না নেয় সে জন্য সতর্ক থাকার আহবান জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং জেলা জামায়াত নেতা ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ। আনজুমানে আল ইসলাহ নেতৃবৃন্দের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- মাসিক পরওয়ানার সম্পাদক মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, আল-ইসলাহর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, আল-ইসলাহর কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, আল-ইসলাহ নেতা মাওলানা জঈন উদ্দিন ও কাজী বুরহান উদ্দিন প্রমূখ।
এ ঘটনার পর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরকে জামায়াতের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মনে করা হলেও ছাত্রশিবির সরাসরি সিলেটের জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
রাত ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানোর এক বিবৃতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ ও মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। আজ সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত একটি বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
“শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরে উপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীরও এ অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমাদের মনে করছি। আমরা অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
এর আগে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শিবির সভাপতি বলেন, সম্প্রতি কুয়েট, এমসি কলেজ ও গত ২০ ফেব্রুয়ারি তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় যে হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা একটি ছাত্রসংগঠনের নব্য ফ্যাসিবাদ হয়ে ওঠার ধারাবাহিকতারই অংশ বলে আমরা মনে করছি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল যুবদলের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে। যেখানে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়। কিন্তু ছাত্রদল তাদের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব শিবিরের ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে, যার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে যায়।
‘একদিকে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে চেষ্টা করে, অন্যদিকে যুবদল তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে নিজের সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়ে যায়। এই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে তা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিলেটের এমসি কলেজে আনযুমানে তালমীযে ইসলামিয়ার কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ সাথে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনায় দুইজন (জাহিদুল ইসলাম হৃদয় ও রিয়াদ) আহত হওয়ার দায় ছাত্রশিবিরের ওপর প্রদান করে। পরবর্তীতে কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পেলে ছাত্রশিবির যে সেই ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তা প্রমাণিত হয়।’
দেশের চলমান বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ‘পথ অনুসরণ করছে’ বলেও মন্তব্য করেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি।