ঘটনা শুরু হয় দুপুর ১২টা থেকে, যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস দাবিতে মিছিল শুরু করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের কার্যালয়ের দিকে এগোতে থাকেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেন এবং এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এটি ক্যাম্পাসের বাইরে আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি বলেন, "শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রশিবিরের কর্মীরা হামলা চালায়। তারপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে, তাদের ওপরও হামলা হয়।" অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন দাবি করেন, "কুয়েটের এই ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সারাদিন জামায়াতের প্রোগ্রামে ব্যস্ত ছিলাম।"
সংঘর্ষে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস, খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন এবং বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে আখেরুল ইসলাম, তানভীর হায়দার এবং অন্যান্যরা শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আহতদের কুয়েট মেডিক্যাল সেন্টার, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ক্যাম্পাসে উপস্থিত রয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা এখনো বিরাজ করছে।
কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ, সন্ধ্যায় বলেন, "বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আহত শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং আমরা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেব।" পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে এবং ক্যাম্পাস ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচিত। কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি নিষিদ্ধ করা উচিত। তবে বিরোধীরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার, এবং এটি নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক অধিকারকে হুমকি দেয়। কুয়েটের ঘটনার মাধ্যমে একটি নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কিত নীতির প্রতি নতুন আলো ফেলছে। তবে এই সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং ক্যাম্পাসে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি সংঘাতমূলক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে, ছাত্রদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার দাবি করা হচ্ছে, অন্যদিকে এই রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং সরকারের উচিত একটি সমাধানমূলক পন্থা অবলম্বন করা, যাতে ছাত্ররা নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশও বজায় থাকে।