দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটা ছিল ভয়াবহ! মাত্র ৩৫ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। মনে হচ্ছিল, ১৫০ রান করাই দুঃসাধ্য যাবে। ভারতের পেসারদের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ব্যাটসম্যানরা যেন ক্রিজে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। তানজিদ হাসান কিছুটা লড়াই করলেও (২৫ রান), বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। শামির বোলিং তোপে প্রথম সারির ব্যাটাররা যেন দিশেহারা!
ঠিক এমন সময় যেন ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়ে নামেন তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিক। উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে বুঝেশুনে ব্যাট চালান তারা। শুরুতে ধৈর্য ধরে খেললেও ধীরে ধীরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে থাকেন এই দুই তরুণ ব্যাটসম্যান। বলের মেধাবী ব্যবহার, স্ট্রাইক রোটেশন, আর সুযোগ পেলে জোরালো শটে বাউন্ডারি—সবকিছু মিলিয়ে তারা তৈরি করলেন অবিশ্বাস্য এক জুটি। ১৫৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলে তারা দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেন। জাকের ১১১ বলে ৬৮ রান করে আউট হলেও হৃদয় তখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
শেষ ওভারে যখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ২৫০ রান ছুঁতে পারে, তখনই হৃদয় আউট হয়ে যান ১১৮ বলে ১০০ রান করে। তার দুর্দান্ত ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ গড়ে ২২৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি ছিলেন ভয়ংকর— ৫ উইকেট নিয়ে তিনি একাই ধস নামান টাইগারদের ইনিংসে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। রোহিত শুরু থেকেই চার-ছক্কার ঝড় তুললেও তাকে থামান তাসকিন আহমেদ। ৩৬ বলে ৪১ রান করে ক্যাচ দেন তিনি। কিন্তু সেই উইকেটও বাংলাদেশের জন্য কোনো স্বস্তি বয়ে আনতে পারেনি।
বিরাট কোহলি তিন নম্বরে নেমে চেষ্টা করলেও ছন্দ খুঁজে পাননি। ৩৮ বলে ২২ রান করে যখন তিনি রিশাদ হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন, তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ হয়তো ম্যাচে ফিরতে পারে। কিন্তু শুবমান গিল একদমই অন্য পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন। তিনি ঠান্ডা মাথায় খেলতে থাকেন এবং একের পর এক দুর্দান্ত শট মেরে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। তার সঙ্গ দিতে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার, তবে তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। ১৭ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
বাংলাদেশ তখনো আশা দেখছিল, বিশেষ করে যখন অক্ষর প্যাটেলও দ্রুত বিদায় নেন (১২ বলে ৮ রান)। ১৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। কিন্তু সেই চাপকে খুব বেশি সময় টিকতে দেননি গিল ও লোকেশ রাহুল। গিল ফিফটির পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। রাহুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে গিল ভারতের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন।
শেষ পর্যন্ত ১২৯ বলে দুর্দান্ত ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন গিল। রাহুল ৪৭ বলে ৪১ রান করে ম্যাচ শেষ করেন এক বিশাল ছক্কা মেরে। ২১ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় ভারত। বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন নেন ২ উইকেট, তাসকিন ও মুস্তাফিজ একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ কিছু দারুণ মুহূর্ত তৈরি করলেও ব্যাটিং বিপর্যয় ও বোলিংয়ের ধার কম থাকার কারণে জয় ধরা দেয়নি। হৃদয়ের সেঞ্চুরি ও জাকেরের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস অবশ্য ভবিষ্যতের জন্য আশা দেখাচ্ছে, কিন্তু ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে হলে আরও দৃঢ় পারফরম্যান্স প্রয়োজন।