গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ইতিহাসে ছিল না কোনো দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস। অথচ চলতি মাসেই দেখা গেল তিনটি! কিন্তু সবার সেরা জায়গাটি দখল করলেন ইব্রাহিম জাদরান। পাঁচ দিন আগেই ইংল্যান্ডের বেন ডাকেট ১৬৫ রান করে রেকর্ড গড়েছিলেন, কিন্তু ইব্রাহিম যেন বললেন, "এই মুকুট আমার!" এক সপ্তাহ পার না হতেই নতুন ইতিহাস লেখা হলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পাতায়। ডাকেট নিজেও হয়তো হতভম্ব হয়ে দেখলেন, কিভাবে তার রেকর্ড এত দ্রুত ইতিহাস হয়ে গেল!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। মাত্র ৩৭ রানেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। গ্যালারিতে তখন শঙ্কার ছায়া, আফগান ডাগআউটেও চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু তখনই মাঠে দাঁড়ালেন ইব্রাহিম জাদরান ও অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। বলের গতি বুঝে, পরিস্থিতির চাপে না ভেঙে খেললেন ধৈর্যের ইনিংস। ৬৫ বলে ফিফটি, এরপর শতক ১০৬ বলে। কিন্তু সেঞ্চুরির পর যেন এক অন্য ইব্রাহিম! স্টেডিয়ামের বাতাসে তখন ছক্কার গর্জন, গ্যালারিতে উল্লাসের ঝড়! মাত্র ১৩৪ বলে পৌঁছে যান দেড়শ রানে, যেন বললেন, "এটাই আমার দিন!"
শেষদিকে মোহাম্মদ নাবির সঙ্গে বিধ্বংসী ১১১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ইব্রাহিম। নাবির ব্যাটেও আসে ২৪ বলে ৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। একদিকে যখন স্ট্রাইক বদলাচ্ছেন, অন্যদিকে রানের গতি বাড়িয়ে দলকে পৌঁছে দিচ্ছেন এক নতুন উচ্চতায়। ইনিংসের শেষ ওভারে যখন তিনি আউট হলেন, তখন পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে সম্মান জানালো এই তরুণ তারকাকে। প্রতিপক্ষও হাততালি দিয়ে দিল অভিবাদন। এমন ইনিংস তো প্রতিদিন দেখা যায় না!
ইব্রাহিমের ব্যাটিংয়ে ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩২৫ রান তুলেছে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটি তাদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর। প্রশ্ন হলো, ইংল্যান্ড কি পারবে এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে? ইতিহাস বলছে, আফগানদের বিপক্ষে ৩১৪ রানের বেশি তাড়া করে কেউ জিততে পারেনি। এবার কি ভাঙবে সেই রেকর্ড, নাকি ইব্রাহিমের ইনিংস হবে জয়ের ভিত্তি?
দীর্ঘ ১১ মাস ওয়ানডে থেকে দূরে থাকার পর এমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তন, যেন এক হারিয়ে যাওয়া নায়কের নতুন করে ফিরে আসা! চোটের পর ক্রিকেটে ফেরা কঠিন, কিন্তু ইব্রাহিম দেখিয়ে দিলেন, সত্যিকারের প্রতিভা কখনো ম্লান হয় না। সুযোগ পেলেই তা ঝলসে ওঠে, ঠিক যেমনটি ঘটল লাহোরের এই রাতে!