করাচিতে কিউই ঝড়! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল নিউজিল্যান্ড

করাচিতে কিউইদের দাপট, পাকিস্তানকে হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা নিউজিল্যান্ডের

ক্রিকেটের লড়াইয়ে শক্তির পালাবদল হয়, তবে নিউজিল্যান্ডের ধারাবাহিকতা সবসময়ই প্রশংসনীয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখাল কিউইরা। করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে একতরফা ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং—দুই দিকেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল নিউজিল্যান্ড। ব্যাট হাতে উইল ইয়ং ও টম ল্যাথামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর গ্লেন ফিলিপসের ঝোড়ো ইনিংস তাদের বড় সংগ্রহ এনে দেয়। এরপর বোলাররা দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে সহজ জয় নিশ্চিত করে।

টসে জিতে পাকিস্তান আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়। ডেভন কনওয়ে (১০) দ্রুত আউট হলেও উইল ইয়ং দারুণ ব্যাটিং করেন। অধিনায়ক উইলিয়ামসন (১) ও ড্যারিল মিচেল (১০) বড় রান করতে না পারলেও ইয়ংয়ের সঙ্গে যোগ দেন টম ল্যাথাম। চতুর্থ উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তাঁরা। ১১৩ বলে ১০৭ রান করেন ইয়ং, আর ল্যাথাম অপরাজিত থাকেন ১০৪ বলে ১১৮ রান করে। শেষ দিকে গ্লেন ফিলিপস মাত্র ৩৯ বলে ৬১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলের স্কোর ৩২০-তে নিয়ে যান। পাকিস্তানের পক্ষে নাসিম শাহ ও হারিস রউফ ২টি করে উইকেট নেন, আর আবরার আহমেদ পান ১ উইকেট।

জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান একেবারেই ধীরগতির ব্যাটিং করে ম্যাচের শুরুতেই চাপে পড়ে যায়। বাবর আজম ও সাউদ শাকিলের উদ্বোধনী জুটিতে ১৯ বলে মাত্র ৬ রান আসে, যা বড় লক্ষ্য তাড়ায় একেবারেই অপ্রত্যাশিত। অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানও ধীরগতিতে ব্যাট করেন এবং ১৪ বলে মাত্র ৩ রান করে বিদায় নেন। প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২২ রান, যেখানে তাদের লক্ষ্য ছিল ৩২১ রান! এমন মন্থর ব্যাটিংয়ের কারণে শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা।

ফখর জামান ৪১ বলে ২৪ রান করলেও দলের রান তোলার গতি বাড়াতে পারেননি। বাবর আজম ফিফটি করলেও, তাঁর ৯০ বলে ৬৪ রানের ইনিংস ম্যাচের পরিস্থিতির তুলনায় বেশ ধীরগতির ছিল। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সালমান আলী আঘা (২৮ বলে ৪২) ও খুশদিল শাহ (৪৯ বলে ৬৯)। শেষদিকে শাহীন শাহ আফ্রিদি (১৩ বলে ১৪) ও হারিস রউফ (১০ বলে ১৯) কিছুটা ঝড় তোলার চেষ্টা করলেও ২৬০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান, ফলে ৬০ রানে হেরে যায় তারা।

নিউজিল্যান্ডের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। মিচেল স্যান্টনার ও উইল ও'রউরকে ৩টি করে উইকেট তুলে নেন, ম্যাট হেনরি পান ২ উইকেট, আর মাইকেল ব্রেসওয়েল ও নাথান স্মিথ ভাগ করে নেন ১টি করে উইকেট। বোলারদের নিখুঁত পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সামনে পাকিস্তানি ব্যাটাররা একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি।

নিউজিল্যান্ডের এই দারুণ জয় শুধু ৬০ রানের ব্যবধানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি তাদের শক্তির বড় প্রমাণ। যেখানে পাকিস্তান ধুঁকেছে, সেখানে কিউইরা দেখিয়েছে পেশাদারিত্ব। টম ল্যাথামের শান্ত ব্যাটিং, উইল ইয়ংয়ের দৃঢ়তা এবং গ্লেন ফিলিপসের বিধ্বংসী ইনিংসের সংমিশ্রণে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ছিল অসাধারণ। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য এটি শুধু একটা হারা ম্যাচ নয়, বরং একটা শিক্ষা। ব্যাটিং লাইনআপের রক্ষণাত্মক মনোভাব বদলাতে না পারলে এই টুর্নামেন্টে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বাবর আজমদের জন্য।

করাচিতে নিউজিল্যান্ডের এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জেতার গল্প নয়, বরং আধিপত্যের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে কিউইরা নিঃসন্দেহে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অন্যতম ফেভারিট হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য সময় এসেছে নিজেদের ব্যাটিং ও কৌশলে পরিবর্তন আনার, নাহলে সামনে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

নবীনতর পূর্বতন