স্বাস্থ্যসম্মত ওজন থাকা শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শরীরের সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে দ্রুত ওজন বাড়ানোর চেয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ানোই বেশি কার্যকর। এখানে আপনাদের জন্য একটি সুষম খাদ্য পরিকল্পনা এবং ওজন বাড়ানোর কিছু কার্যকর কৌশল তুলে ধরা হলো।
সকালের নাস্তা:
সকালের নাস্তা শরীরকে সারাদিনের জন্য প্রস্তুত করে। স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ানোর জন্য নাস্তায় নিম্নোক্ত খাবারগুলো রাখতে পারেন:
দুধ:
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম বা ঠান্ডা দুধ পান করুন। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শরীরের পেশি গঠনে সাহায্য করে।
কলা:
সকালের নাস্তায় ১-২টি কলা খান। এতে প্রচুর ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা শক্তি জোগায় এবং ওজন বাড়াতে সহায়ক।
ডিম:
প্রতিদিন ১-২টি সিদ্ধ বা ভাজা ডিম খান। ডিমে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন বি-১২ পেশি গঠনে কার্যকর।
খেজুর:
খেজুর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে ৩-৪টি খেজুর খেলে শরীরে শক্তি সঞ্চার হয়।
দুপুরের খাবার:
দুপুরের খাবার ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পুষ্টিকর ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন:
ঘন ডাল:
ডাল প্রোটিন ও ফাইবারের চমৎকার উৎস। পাতলা ডালের চেয়ে ঘন ডাল শরীরের জন্য বেশি উপকারী।
মুরগির মাংস:
দিনে অন্তত ২ টুকরো মুরগির মাংস খান। এটি প্রোটিন সরবরাহ করে এবং সহজপাচ্য।
টক দই:
প্রতিদিন এক বাটি টক দই খাওয়া অভ্যাস করুন। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে।
রাতের খাবার:
রাতের খাবারে দুপুরের মতো পুষ্টিকর উপাদান রাখুন। তবে খুব ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
ভাতের সাথে ঘন ডাল বা মুরগির মাংস রাখুন।
এক বাটি টক দই বা একটি সিদ্ধ ডিম যোগ করতে পারেন।
পেট ভরে খাবার খাওয়ার চেয়ে পুষ্টিকর খাবারে মনোযোগ দিন।
হালকা নাস্তা বা স্ন্যাকস
ওজন বাড়াতে প্রতিদিনের খাবারের ফাঁকে স্বাস্থ্যকর হালকা নাস্তা খুবই কার্যকর:
বাদাম ও বীজ:
কাজুবাদাম, চিনাবাদাম বা সূর্যমুখীর বীজ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে। এগুলো হালকা ক্ষুধা মেটানোর জন্য উপযুক্ত।
কিসমিস:
কিসমিস ছোট হলেও এতে প্রচুর ক্যালোরি এবং ভিটামিন থাকে। বাদামের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
ফলের বীজ:
তিল বা মিষ্টিকুমড়ার বিচি ভাত বা তরকারির সাথে মিশিয়ে খেলে এটি পুষ্টি যোগায়।
ওজন বাড়ানোর সময় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন
সাগুদানা: এতে পুষ্টি উপাদান কম এবং অতিরিক্ত চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে।
মিষ্টি দই ও পুডিং: অতিরিক্ত চিনি থাকায় এটি স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম
ওজন বাড়ানোর সময় শুধু চর্বি নয়, বরং পেশি বৃদ্ধি করাও জরুরি। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়ামের জন্য সময় দিন। কিছু কার্যকর ব্যায়াম:
পুশআপ: বুকে এবং বাহুতে পেশি গঠন করে।
স্কোয়াট: পায়ের পেশি শক্তিশালী করে।
প্ল্যাংক: পেটের পেশি মজবুত করে।
সতর্কতা ও পরামর্শ:
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি থাইরয়েড বা ডায়াবেটিসের মতো কোনো সমস্যা থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনা করুন।
অন্য সমস্যার সমাধান করুন: খাবারে অরুচি বা হজমের সমস্যা থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা নিন।
কোনো প্রকার ওষুধ এড়িয়ে চলুন: বাজারে মোটা হওয়ার ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
শেষ কথা:
ওজন বাড়ানোর জন্য দ্রুত ফলের চেয়ে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানো বেশি কার্যকর। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার ধৈর্য আর সচেতন প্রচেষ্টাই আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।