অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য পর্যটক প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে। মূলত পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও প্রবালদ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে, দীর্ঘমেয়াদি এ নিষেধাজ্ঞার ফলে পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী জানিয়েছেন, সাধারণত পর্যটন মৌসুম ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এবার সময়সীমা কমিয়ে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অন্তত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের দ্বীপে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানও একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দার জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে তারা যা উপার্জন করেন, তা দিয়েই সারা বছর সংসার চালান। নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর সেন্টমার্টিনগামী কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। তবে, সরকার যদি পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাহলে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে, পর্যটকদের জন্য সীমিত প্রবেশ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গত নভেম্বরে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে ফেব্রুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে।
সরকারের দাবি, সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং দ্বীপের প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যটন ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তবে, স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করা হলে দ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে। তারা আশা করছেন, সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে, যাতে দ্বীপের মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন সংকটের মুখে না পড়ে।