মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাময়িক শান্তির পরিবেশ ফিরে আসার ফলে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গত দুইদিন ধরে গোলাবারুদের বিকট শব্দ শোনা যায়নি। এই অবস্থায় সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তবে সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সাময়িকভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দাদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের গোলাগুলির আওয়াজের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের জীবন ছিল অস্থির। বিশেষত, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া এবং শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা নাফ নদী ও আশপাশের এলাকা দিয়ে মাছ ধরতে কিংবা লবণ চাষ করতে ব্যস্ত থাকলেও গোলাগুলির কারণে তাদের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছিল।
টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটের ভ্রাম্যমাণ দোকানি নুরুল ইসলাম বলেন, "বিগত কয়েক মাসে গোলাবারুদের আওয়াজে আমাদের রাতের ঘুম ছিল বিঘ্নিত। তবে গত দুইদিন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি, যার ফলে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।"
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, "গোলাগুলির আওয়াজ না শোনার কারণে এখন দ্বীপের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ শান্তিতে কাজ করছে। রাতের সময়টা অনেকটাই নির্ভয়ে কেটে যাচ্ছে, যা আগে সম্ভব ছিল না।"
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের বোট মালিক আবদুর রশিদ বলেন, "মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতার কারণে আমাদের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে এখন গোলাবারুদের আওয়াজ না শোনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শান্তি ফিরেছে।"
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন জানান, "মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ার পর সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সেন্টমার্টিনে পর্যটক এবং দ্বীপবাসীদের জরুরি সরবরাহের জন্য বিকল্প নৌযান চলাচল নিয়ে আলোচনা চলছে।"
গোলাগুলির আওয়াজের কারণে মাঠে কাজ করতে না পারার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লবণ চাষি জিয়াবুল বলেন, "গোলাবারুদের আওয়াজের কারণে মাঠে কাজ করা সম্ভব হয়নি, তবে গত দুইদিন শান্ত পরিবেশে আমরা মাঠে কাজ করতে পারছি।"
টেকনাফ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, "বিজিবি সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।"
এদিকে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের পর আরাকান আর্মি মংডু শহরের সর্বশেষ পোস্টটি দখল করেছে, যার ফলে নাফ নদী ও সীমান্তে নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে টেকনাফ সীমান্তে গোলাবারুদের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে, যা সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।
উবেদুল্লাহ তালুকদার : সবুজ প্রান্ত ডটকম