জকিগঞ্জে মাজেদ আহমদ চঞ্চলের সাহিত্য ও সমাজকর্ম নিয়ে স্মরণসভা

অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চল তাঁর বিনয় ও বহুমুখী প্রতিভার গুণে মানুষের অন্তরে বহুকাল বেচে থাকবেন : কবি কালাম আজাদ

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি, সিলেট উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল কবি কালাম আজাদ বলেছেন, একজন মানুষের মৃত্যুর পরে তাকে যদি আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি তাহলে তার কাছ থেকে তার একটি গুন ধার করে নিতে হয়। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চল একাধারে একজন শিক্ষক, লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও সমাজসেবী ছাড়াও সবচেয়ে বড় গুণ হল তার বিনয়। অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চল তাঁর বিনয় ও বহুমুখী প্রতিভার গুণে মানুষের অন্তরে বহুকাল বেচে থাকবেন। বিনয়ী ব্যক্তিরাই মানুষের শিক্ষক হিসেবে গণ্য হন। যারা শিক্ষক রয়েছেন আপনারা শিক্ষার্থীদের শুধু লার্নার বলবেন না। বলবেন তুমি জুনিয়র লার্নার, আমি সিনিয়র লার্নার। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ভদ্রলোক হতে পারবো না যতক্ষণ আমাদের ডান-বামের লোকদের নিজের থেকে একটু হলেও জ্ঞানী মনে না করবো। অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চল এরকম একজন বিনয়ী মানুষ ছিলেন। এমন গুণের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে এসব বিনয়-নম্রতার খুবই অভাব। সর্বত্রই অন্যের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব আর বড়ত্বের প্রতিযোগিতা চলছে, যা জীবনের উপভোগকে বিস্বাদ করে তুলেছে। দাম্ভিকতা আর আমিত্বের এই প্রতিযোগিতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ শুক্রবার রাতে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জকিগঞ্জের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম অভিভাবক কবি ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চলের সাহিত্য ও সমাজকর্ম নিয়ে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

স্মরণসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক কবি এমএ ফাত্তাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী স্যার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জকিগঞ্জ লেখক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল হাকীম, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবি মহিউদ্দিন হায়দার।

স্মরণ সভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব কবি হাবীবুল্লাহ মিসবাহ'র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক জুবায়ের আহমদ। অনুভূতি পেশ করে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চলের পুত্র তাওসিফ মাজেদ পিহাম, জকিগঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক বাছিত ইবনে হাবীব, লেখক কলামিষ্ট মাওলানা মুখলিছুর রহমান, জকিগঞ্জ লেখক পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা ফদ্বলুর রহমান, জোবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার মানিক, লুৎফুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, কবি ফজলুর রহমান ফজলু, মোহনা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি শিপুর আমিন চৌধুরী, ছড়াকার ছালিক আমীন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জকিগঞ্জের সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখায় অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁর পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহন করেন অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চলের পুত্র তাওসিফ মাজেদ পিহাম। তাছাড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে নিয়ে একটি স্মৃতিস্মারকেও মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন ছড়াকার আহমদ আল মঞ্জুর, সংগীত পরিবেশন করেন নাশিদ শিল্পী রিয়াদুর রহমান চৌধুরী, নিবেদিত কবিতা আবৃত্তি করেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা স্মৃতিচারণ করলেও তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি শেষ করা যাবে না। জকিগঞ্জের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও স্কাউটসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে মাজেদকে আমরা দেখতে পাই। তাঁর মৃত্যুর পর এসব রেখে যাওয়া স্মৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। আমরা নির্ধিধায় বলতে পারি, পুরো জকিগঞ্জবাসী বহুমুখী প্রতিভাধর একজন মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে হারালো। যার শূণ্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন মেধাবী শিক্ষক, দক্ষ সংগঠক ও প্রতিভাবান লেখক হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল সর্বমহলে। তাই তিনি মানুষের মনের মনিকোঠায় বেঁচে থাকবেন বহুকাল।

স্মরণসভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব লায়েক, সাংবাদিক আহমদ হোসাইন আইমান, সাংবাদিক আজাদুর রহমান, সাংবাদিক আব্দুশ শহীদ শাকির, ক্বিরাআতুল কোরআন পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রুম্মান চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী আহমদুল হক, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আব্দুল মালেক ও আশরাফুজ্জামান রাদি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন