জকিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জন : ভারত-বাংলার দুই তীরে সম্প্রীতির মিলনমেলা


উৎসবমুখর পরিবেশে শেষবারের মতো তেল-সিঁদুর পরিয়ে ধান, দূর্বা, মিষ্টি দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) জকিগঞ্জ পৌরসভার কাস্টমঘাটস্থ কুশিয়ারা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। বিজয়া দশমীর দিন মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের মধ্যে বিষাদের ছায়া ছিল। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্ত্রপাঠ ও সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে নারীরা। মর্তলোক থেকে কৈলাসে দেবীকে বিদায় জানাতে নেচে গেয়ে মাতোয়ারা হয়ে সেজেছিলেন উৎসবের বর্ণিল রঙে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পুজামন্ডপ থেকে শোভাযাত্রাসহ নেচে গেয়ে কাস্টমঘাটে এসে প্রতিমা বিসর্জন করেন পূজার্থীরা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে ঘিরে ভারত-বাংলার দুই তীরে আনন্দে মেতে ওঠে সীমান্ত ঘেঁষা এ নদীপাড়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন মহল। ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। ভারত-বাংলার নদীর দুই তীরে দু-দেশের প্রতিমা বিসর্জন দেখতে অগণিত লোক সমাগম ঘটে। অসংখ্য মানুষের পদচারণয় মুখরিত হয়ে উঠে জকিগঞ্জ শহরের কাষ্টমঘাট ও ভারতের কাষ্টমঘাটস্থ অখন্ড মন্ডলী মন্দিরের আশপাশ এলাকা। কয়েক যুগধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে এ উৎসব ভারত-বাংলাদেশের দুই তীর এভাবেই চলে আসছে।

বিজয়া দশমীতে পূজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে বিসর্জন ঘাটে আসেন রাজনীবিদ ও জনপ্রতিনিধিগণের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জকিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। প্রতিমা নিরঞ্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ডিবি পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সর্তক অবস্থায়। ভারতের করিমগঞ্জেও দেখা গেছে সেখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।

প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মঞ্চে উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজস বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন, বিজিবি ১৯ ব্যটালিয়নের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ, জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রিপন আহমদ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সামাদুর রেজা চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনোয়ার খান সহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দ।

এ সময় বক্তারা বলেন, বিশ্ব দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। আবহমান কাল থেকে আমাদের দেশের মানুষ পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। সরকার সকল ধর্মের মানুষের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। পুরনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে অবদান রাখতে বক্তারা আহবান জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম ইনকিলাবকে জানান সর্বজনীন ৭৬ ও একক ৬ টি মিলে সর্বমোট ৮২ টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে পুজা সম্পন্ন হয়।

অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও কাস্টমঘাটে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে স্টেইজ সহ যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় ছিল জকিগঞ্জ পৌরসভা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন