জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের ইমামতি কে করবেন তা নিয়ে বিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মসজিদের ভেতরে ভাঙচুরও চালানো হয়। অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারণে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা গেলেও মসজিদের ভেতরে এমন ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা নজিরবিহীন।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছেন ঘটনার কেন্দ্রে থাকা খতিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন।
সাধারণত জুমার নামাজের ইমামতি করেন মসজিদের খতিব। তবে, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'কওমী জননী' উপাধি প্রদানকারী বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমীন গত জুলাই থেকে অনুপস্থিত থাকায় এতদিন অন্য দায়িত্বশীলদের দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করানো হতো।
কোনো কোনো গণমাধ্যমে মাওলানা রুহুল আমীনের এই অনুপস্থিতিকে 'সরকার পতনের পর আত্মগোপনে' যাওয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অবশ্য এই সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানান রুহুল আমীন। প্রায় দুই মাস পর শুক্রবার তিনি মসজিদে আসেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের ইমামতির জন্য আগে থেকে দায়িত্ব দেওয়া ছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক বিশিষ্ট মুহাদ্দিস মাওলানা ড. আবু ছালেহ পাটোয়ারীকে। ড. আবু ছালেহ পাটোয়ারীসহ কয়েকজন মুসল্লি খতিবের কক্ষে গিয়ে মাওলানা রুহুল আমীনকে জুমার নামাজে ইমামতি থেকে বিরত থাকতে বলেন তারা।
ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, 'পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুরোধ করা' হয়েছে। অন্যদিকে মাওলানা রুহুল আমিন বলছেন তাকে 'দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়া' হয়েছে।
এরপর, সেখান থেকে গিয়ে খুতবায় দাঁড়ান ড. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন মাওলানা রুহুল আমীন। মিম্বারে অবস্থান নেয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা দেখা দেয় তাদের সঙ্গে থাকা মুসল্লিদের মধ্যে।
পরস্পরের অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, দু'জনের সঙ্গেই বেশ কিছু অনুসারী ছিলেন। উপস্থিত মুসল্লিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
"আমি খুতবা শুরু করেছিলাম। উনি দলবল নিয়ে এসে জোর করে মিম্বারে দাঁড়ায়। আমাকে একজন সরে যেতে বলে। আমি সরে দাঁড়াই," গণমাধ্যমকে এমনটাই বলছিলেন ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী।
অন্যদিকে মাওলানা রুহুল আমীন গণমাধ্যমকে বলেন, "ড. পাটোয়ারী সাহেবের সঙ্গেরা লোকেরা হট্টগোল করছিল। মুসল্লিরা আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে রাখেন। আমি বয়ান শুরু করি। এর মধ্যে উনি(ড. পাটোয়ারী) আমাকে বলেন, আপনি নামেন।"
যদিও, ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলছেন, খতিবের নিরাপত্তা এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় তাকে চলে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আর 'নিরাপদ' মনে না হওয়ায় স্থান ত্যাগ করেন হাফেজ মাওলানা রুহুল আমীন। খতিব রুহুল আমীন ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও ততক্ষণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে দু'পক্ষে।
ড. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, মসজিদের প্রবেশদ্বারগুলোতে মাওলানা রুহুল আমীনের লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা সাধারণ মুসল্লিদের মারধোর করেছে।
তবে, মাওলানা রুহুল আমীনের পাল্টা অভিযোগ, হট্টগোল করেছে ড. পাটোয়ারীর সঙ্গে থাকা লোকেরা।
গণমাধ্যমসহ ফেইসবুকে ভাইরাল ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, জুতা রাখার বাক্স, জুতা ছুড়ে মারছেন মুসল্লিরা। মসজিদের দরজা-জানালাও ভাঙচুর করা হয়।
ভিডিওতে মুসল্লিদের একাংশকে আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। মাইকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বানও জানানো হচ্ছিল। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। দুই খতিবই এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সুষ্ঠু সমাধান চাইবেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
'মুসল্লি কমিটি'
ঘটনার শুরুতে খতিবের রুমে যারা গিয়েছিলেন তারা নিজেদেরকে 'মুসল্লি কমিটি' বলে পরিচয় দেন।
মাওলানা রুহুল আমীনের অভিযোগ তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। ড. আবৃ ছালেহ পাটোয়ারী বলছেন, তারা মসজিদের সাধারণ মুসল্লি।
ড. পাটোয়ারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকও বটে। তিনি বলেন, সাধারণ মুসল্লিরা মিলে একটি কমিটির মত গঠন করেছেন। যেটি মুসল্লী কমিটি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রদবদল দেখা গেছে।
কোথাও সরকারের নির্দেশে বদলি বা অবসরে পাঠানো হয়েছে। কোথাও 'ফ্যাসিবাদের দোসর বা সুবিধাভোগী' হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে কেউ কেউ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
তাদের কাছ থেকে জাতি এমনটা আশা করেনি
উত্তরমুছুন