মাহমুদ রহমান ::
সামনে মসনদ। তাই সোজা হয়ে কেউ লাইনে দাঁড়াতে চাচ্ছে না। একে অন্যে গুতাগুতি করে যার যার জায়গা বড় করে নিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় এই গুতাগুতি বড্ড তাড়াতাড়ি শুরু করে দিয়েছেন। আপনারা বরং কিছুদিন গ্যালারীতে বসে বাদাম চিবাতে থাকুন আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কাজ কারবার দেখুন।
আওয়ামীলীগকে ক্ষমা করবেন নাকি বিচার করবেন, নিষিদ্ধ করবেন নাকি রাজনীতির সুযোগ দিবেন- এগুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে লাভ নেই। উপদেষ্ঠা নাহিদ ইসলাম এব্যাপারে বলে দিয়েছেন। আগে বিচার হবে তারপর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে। সংস্কার কেমন হবে- তাও প্রধান উপদেষ্ঠার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলে দিয়েছেন। সংবিধান পূণর্লিখন করা হবে। তাই আপাতত মনে হচ্ছে ওরা বয়সে তরুণ হলেও চিন্তায় অনেক ম্যাচিউরড। আপনারা গ্যালারীতে বসে বাদাম খেতে খেতে বাদামের খোসা ফেলা নিয়ে ঝগড়া শুরু করলে কিন্তু সিকিউরিটি আপনাদের গ্যালারী থেকে বের করে দিবে।
এভাবে অবসর বসে থাকতে ভালো লাগবে না। ফুলটাইম পলিটিশিয়ানরা তো আর বসে থাকতে পছন্দ করে না। তাই আপনাদের দুই দলকে দুটো হোমওয়ার্ক দিয়ে রাখি যাতে আপনাদের সময় ভালো কাটে। ঝগড়ার সময় না পান।
প্রথমে বিএনপি। আপনাদের ঘর সামলান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সহ সিনিয়র নেতারা রাতদিন শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য বলছেন। কিন্তু তবুও মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন অপকর্মের খবর চাউর হচ্ছে। বিগত বিএনপি সরকারের সময় অপারেশন ক্লিন হার্টের মাধ্যমে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের এসব অপকর্মকারীদের অপসারণ করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর আমরা কোনো ফর্মেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড দেখতে চাই না। এজন্য এখনই দলে সংস্কার সাধন করতে হবে। দলের সব স্তরে নেতা বানানোর প্রক্রিয়া ঠিক করে নিতে হবে। নেতাকর্মীদের কাজের নিরপেক্ষ রিপোর্ট কালেকশনের জন্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এরকম শুভাকাঙ্খীদের নেটাওয়ার্ক গড়ে তোলার বন্দোবস্ত করত হবে। যাতে ক্ষমতায় গিয়ে জনজীবনে নিরাপত্তা বিধানের জন্য আর কোনো নতুন অপারেশন চালাতে না হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে গুতাগুতি না করে ঘর সংস্কারে কাজ শুরু করলে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
এবার জামায়াত। বিএনপি যে সমস্যায় ভুগছে আপনাদের সেটা নেই। তাই একধরণের তৃপ্তির ঢেকুর সবার মধ্যেই। কিন্তু আপনাদের মধ্যে যে চেতনা রয়েছে তা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামীলীগের চেয়েও ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামীলীগ একাত্তরের চেতনা নামক খুবই দূর্বল একটি চেতনাকে সামনে নিয়ে সারাদেশে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। কোথাও তাদের চিন্তার বাইরে কেউ কথা বললেই তাকে স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গী এরকম তকমা দিয়ে ঠুঁটি চেপে ধরেছে। আপনাদের হাতে রয়েছে ধর্মীয় চেতনা। যা মানুষকে একাত্তরের চেতনার চেয়ে বহুগুন বেশি আবেগতাড়িত করতে পারে। ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা রয়েছে। এসব চিন্তাকে আপনাদের কর্মী সমর্থকরা কতটুকু স্পেইস দিতে রাজি আছে? শিয়া-সুন্নি, আহলে কোরআন, আহলে হাদিস, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এসব নানান মতভিন্নতা রয়েছে। এখন আপনাদের চিন্তার বাইরের যারা থাকবে তাদের মুখ চেপে ধরবেন নাকি ধর্মের জন্য ক্ষতিকারক বলে তাদের দমন করবেন? একটা ছোট্র উদাহরণ দেই। মুখে দাড়ি রাখা সুন্নাত হিসেবে আমরা জানি। এখন কতটুকু রাখা সুন্নাত তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কে আমরা মোটামুটি অনেক বছরে অভ্যস্থ হয়েছি। এখন কেউ যখন এসে বলবে ভাই, তৎকালীন আরবে আমাদের নবীর প্রতিপক্ষ যারা ছিল তাদের মুখেও দাড়ি ছিল। এজন্য এটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। নতুন এ কথা শোনার পর আপনারা উল্কার গতিতে তার উপর ঝাপিয়ে পড়বেন নাকি তার একথা বলার স্বাধীনতা থাকবে আপনাদের সময়ে এগুলো চিন্তা করেন। শরীয়া আইনের বিতর্ক কীভাবে সীমিত করে দেশ চালাবেন তা নিয়ে অন্যান্য ইসলামী স্কলারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর গ্যালারীতে বসে ছাত্রদের খেলা দেখে দেখে বাদাম চিবুতে থাকুন। গুতাগুতি বন্ধ করেন।
আর বেশি কিছু লিখছি না। এখনই হয়তো অনেকেই বিরক্ত হয়ে বলা শুরু করছেন, ‘আমেরিকায় বসে তুমি বেশি বুইঝো না, আমি দেখতেছি’। একথা শুনলেও ভয় হয়। ২০০৯ সালে উনি দেখতে দেখতে ৫৭ সেনা অফিসারের জীবন চলে গিয়েছিল। আর এখন আপনাদের দেখাদেখি আর গুতাগুতির তালে যদি শহীদ আবু সাইদসহ শত শত তরুণের জীবনদান ব্যর্থ হয়ে যায়!!
সঠিক সময়ে সবার সুমতি হোক। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।।
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪
মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।
আপনাকে চিনেছি বলে মনে হয়।
উত্তরমুছুন