শিক্ষার্থীরাই হোক শিক্ষকদের সম্মানের রক্ষাকবচ


মাওলানা মোহাম্মদ নজমুল হুদা খান 
আমরা সকলেই বলি, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। জাতির এই মেরুদণ্ড এমনি এমনি সুদৃঢ় হয় না। এর জন্য মানুষকে শিক্ষকের দ্বারস্থ হতে হয়। শৈশবে মানুষের প্রথম শিক্ষালয় মায়ের কোল এবং প্রথম শিক্ষক মা। এরপর পরিবারে বাবার নিকট থেকে কিংবা তাঁকে দেখে দেখে মানবশিশু অনেক কিছু শেখে। এরপর কিছুটা বড় হলে ঘরের বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখতে যায়। যার কাছ থেকে মানবশিশু শিখে তাকে মাতা-পিতার মতো দেখে। একজন শিক্ষকও আপন শিক্ষার্থীকে সন্তানের মতো দেখেন, সন্তানের মতো ভালোবাসেন। সন্তান কিংবা সন্তানতুল্য ছাত্রের সফলতাকে শিক্ষক নিজের সফলতা মনে করেন।  শিক্ষক শিক্ষার্থীর এই ভালোবাসা, এই সম্পর্কের কোনো তুলনা হয় না।

শিক্ষক শিক্ষার্থীর পারস্পরিক ভালোবাসার এই সম্পর্ক আদিকাল থেকেই। কালের পরিক্রমায় এই সম্পর্কে আগের পবিত্র অনুভূতি ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা কালিমালিপ্ত হলেও এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অটুট আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে জিম্মি করে পদত্যাগে বাধ্য করছে, শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছে।  এটি অত্যন্ত অমানবিক। আমার ধারণা, কোমলতি শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে, শিক্ষক সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে, কিছু কুচক্রী মহল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে। কোথাও কোথাও শিক্ষকদের কিংবা কমিটির একপক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এর শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকের ভুল হতে পারে না আমি এমনটি বলছি না। বরং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকও ভুল করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষকবৃন্দ তো পিতৃ-মাতৃতুল্য। পিতা-মাতা কোনো ভুল করলে কিংবা কোনো অপরাধে জড়িত হলে আমরা তো তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেই না, তাদের গায়ে হাত তুলি না। তাহলে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কেন এমন করবো? শিক্ষকবৃন্দ কোনো অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এমন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ আছে। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা তা সে সকল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে পারি। তবু অনুরোধ, শিক্ষকদের যেন আমরা অসম্মান না করি। আমরা যেন কারো রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের মাধ্যম হয়ে আমাদের জীবনকে কলঙ্কিত না করি।

শিক্ষকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ, আপনারাও শিক্ষার্থীদের পিতৃ-মাতৃস্নেহ দিন, তাদের কাছে টানুন। তাদের নিজের প্রতিপক্ষ না ভেবে সবসময় আপন ভাবুন। নিজের কর্মপন্থায় কোনো ভুল থাকলে তা শোধরে নিন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সৌহার্দ্যে ফুলে-ফলে সুশোভিত হোক সকল প্রতিষ্ঠান। 

সবশেষে বলতে চাই, শিক্ষার্থীরা তারুণ্যের চেতনায় উজ্জীবিত। স্বৈরাচারী সরকার পতনে তারা অবর্ণনীয় ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতায় তাদের বিপ্লবে আমরা গৌরবান্বিত। আমরা আশা করি, শিক্ষকদের সম্মান রক্ষায়ও তারা আবার গৌরবময় ভূমিকা পালন করবে। সকল  প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়াবে। শিক্ষার্থীরাই হবে শিক্ষকদের সম্মানের রক্ষাকবচ।
-
লেখক : মুহাদ্দিস, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন