সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের দাসগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী দু'পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। একপক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে আদালত ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি নানা পন্থা অবলম্বন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে চলমান বিরোধ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ১৩ এপ্রিল উভয় পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনে।
দু’পক্ষের একপক্ষে রয়েছেন উপজেলার দাসগ্রামের মৃত মানিক লাল গোস্বামীর উত্তরসূরীরা ও অন্য পক্ষে রয়েছেন প্রতিবেশী বিমল বিশ্বাসসহ প্রতেবেশী কয়েকটি পরিবার।
জানাগেছে, মৃত মানিক লাল গোস্বামীর ঘরের আঙ্গিনার সামন দিয়ে মঠে যেতে পূর্ব পুরুষের আমল থেকে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যাতায়াত করে আসছেন। তাদের বাড়ির উত্তরের বাসিন্দা বিমল দাস ও দিগেন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ির হওয়ায় লোকজন এদিকে যাতায়াত করেন। রাত-দিন স্থানীয়দের অবাধে চলাফেরা করতে মৃত মানিক লাল গোস্বামী পুত্রবধূ শুক্লা চক্রবর্তীসহ পরিবারের লোকজন বিমল বিশ্বাস ও স্থানীয়দের বাধা দেওয়ার কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে শুক্লা চক্রবর্তীর পরিবারের লোকজনের উপর হামলা ও মারধর করেন। হামলার শিকার হয়ে আহত হন- শুক্লা চক্রবর্তীর, জুমা চক্রবর্তীর ও লিটন গোস্বামী। পরে শুক্লা চক্রবর্তীর বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এবং তাদের মালিকানাধীন জায়গায় সুপারি গাছের চারা রোপণ করেন।
এদিকে বিগত কালবৈশাখী ঝড়-তুফান তাদের দেবতা ঘর পড়ে গেলে সিলেট জেলা হিন্দু মহাজোট ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পুনরায় দেবতা ঘর নির্মান কাজ শুরু করলে বিমল দাস ও স্থানীয়রা বাধা প্রদান করেন। বর্তমানে যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় ও মন্দির নির্মাণ নিয়ে উভয় পক্ষে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিমল দাস বলেন, বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। মানুষের বাড়ির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে আমাদের। এ ব্যাপারে আমি জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারবারে একটি লিখত অভিযোগ দায়ের করেছি।
শুক্লা চক্রবর্তীর বলেন, আমরা ব্রাহ্মন পরিবারের সদস্য। আমাদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে মন্দির নির্মাণ করছি। দীর্ঘদিন এলাকাবাসী ও প্রতিবেশী দুটি পরিবারকে যাতায়াত করতে সুযোগ দিয়েছি। এতে আমাদের চরম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। ঘরের সামন দিয়ে সবসময় মানুষের চলাচলের কারণে যুবতী মেয়ে ও পুত্রবধূদের চলাফেরা করতে অনেক সমস্যা হয়। এজন্য এদিকে যাতায়াত বন্ধ করতে চাইলে আমার পরিবারের লোকজনদের মারধর করেন বিমল দাস সহ স্থানীয় কয়েকজন। দাসগ্রামে আমাদের বংশের লোকজন কম হওয়ায় একের পর এক নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।
এদিকে মন্দিরের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট সিলেট জেলা শাখার ছাত্র নেতারা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এবং স্থানীয় সকল সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দিরের পক্ষে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসনিম বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি ঘটনার সত্যতার সাথে মিল থাকলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইবে।