বিশ্বনাথ প্রতিনিধি ::
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে’ সৃষ্ট বন্যায় একের পর এক গ্রাম প্লাবিত করার ফলে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। এতে চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার সর্বসাধারণ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা গবাদি পশু নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ জন।
উপজেলা সদরের সাথে ইতিমধ্যে অনেক ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গ্রামে থাকা পুকুর ও মৎস্য খামারগুলো বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ ও মাছের পোনা। সংকট সৃষ্টি হয়েছে গবাদি পশুর খাদ্যের। কৃষি জমিগুলো দীর্ঘদিন ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকার ফলে নষ্ট হয়ে পড়ছে ধান ও সবজি বাগানগুলো।
এছাড়া বাড়িঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকার ফলে নিজেদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে মহাবিপা থাকা মানুষগুলোর ঘরের গুলায় থাকা হাজার হাজার টাকার ধান-চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হতে শুরু করেছে।
বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে উপজেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজারের দোকানপাঠ, বাড়িঘর, গুচ্ছগ্রাম, পুকুর, খামার, সরকারি-বেসরকারি অফিস’সহ ছোট-বড় রাস্তাঘাটগুলো। ফলে সময়ে সাথে সাথে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। ২০২২ সালের বন্যার পর এবারের বন্যা আরোও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে, এমন আতংঙ্ক বিরাজ করছে জনসাধারণের মনে।
গত কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অনেক এলাকা ঈদুল আযহার পূর্ব থেকে প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে এসব এলাকায় ঈদের আনন্দের চেয়ে মানুষের মনে অজানা আতংঙ্কই বিরাজ করছে বেশি। আর সময়ের সাথে সাথে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়ে চরম আকার ধারণ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল পর্যন্ত পৌর এলাকা’সহ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার হাতেগুনা যে কয়েকটি সড়ক এখনও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়নি তাতে মানুষের পাশাপাশি রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলোও। সরকারিভাবে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ চলমান থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটে অনেক এলাকায় এখনও ত্রান পৌঁছায়নি বলেও জানা গেছে। অবার অনেক এলাকায় ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিলেটে আসা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান এমপি গত বুধবার (১৯ জুন) বিশ্বনাথের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে গেছেন। এসময় তিনি সিলেটের বন্যার্তদের জন্য নগদ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য, ১০ লাখ টাকার গবাদি পশুর খাদ্য, ৫ শতাধিক মেট্টিক টন চাল ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধের ঘোষণা দেন। স্থানীয় এমপি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাথে নিয়ে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের লামাকাজী পয়েন্টে এসময় তিনি ৮ শতাধিক মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, এখন পর্যন্ত (২০ জুন) উপজেলা ৮৬২ হেক্টর আউশ ধান চাষকৃত জমি ও ১২০৭ হেক্টর সবজি চাষকৃত জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সঠিকভাবে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসনের সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের পাশাপাশি বন্যার্তদের পাশে সমাজের বিত্তবান ও প্রবাসীদের’সহ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদেরকে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি।
বিষয়
বন্যা