এস.পি সেবু, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :
বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী। সুরমা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ সুরমা , বিশ্বনাথ , উসমানীনগর , জগন্নাথপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। এ নদীর সঙ্গে অসংখ্য খাল, বিল, হাওর ও ছোট-বড় নদীর সংযোগ রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে এ নদীতে লঞ্চ, ইঞ্জিনের নৌকা, পালতোলা নৌকা, বালু-পাথরবাহী নৌকা সারি সারি চলাচল করত। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্যমতে, প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের যাতায়াতের মূল পথ ছিল বাসিয়া নদীর জলপথ।
আজ এই বাসিয়া নদীটি নাব্যতা হারিয়ে মরা খাল বা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। বাসিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা গঞ্জ বা বাজারের অধিকাংশ অবৈধভাবে দখল করে কলকারখানা, হোটেল, কেমিক্যাল কারখানার অট্টালিকা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল নদীর দুই তীর দখল করে ৫-৬ তলা ভবন নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। বাসিয়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মাসুকগঞ্জ বাজার, কামালবাজার, মুনশীবাজার, লালাবাজার, বিশ্বনাথ শহর, কালিগঞ্জবাজার, গুদামঘাট, কোনারাইবাজার, রানীগঞ্জ, জামালপুরবাজার সহ ছোট বড় হাট বাজার সমূহ।
প্রতিটি হাট-বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীটিকে ড্রেন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নদীটি গভীরতা হারিয়ে এখন মাত্র ৬০ থেকে ১০০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারি তালিকামতে ৫০০ মিটারের মধ্যে ১৬০টি, তিন কিলোমিটারের মধ্যে মোট ১৮৬টি অবৈধ স্থাপনা দৃশ্যমান আছে। অন্যদিকে বাসিয়া নদীর সুরমা নদী থেকে উৎপত্তিস্থলের মুখ এবং শেষে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়া মুখ পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অনেকে ওই দুই মুখে অবৈধভাবে স্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে। এ কারণে নদীর স্রোত হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে নদীর মধ্যভাগে পলি মাটি জমে নদীর তীর ও তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।
নদীটিতে ২০১৩-১৫ সালে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার খননকাজ করেছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ১৮ কিলোমিটারের শেষ মাথায় বিশ্বনাথ বাজারের অবৈধ স্থাপনা থাকায় খননকাজ সম্পন্ন করা যায়নি। ২০১৬ সালে আবার জলবায়ু পরিবর্তন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭ কিলোমিটার খননকাজ হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড আবার বিশ্বনাথ বাজার বাদ দিয়ে খননকাজ শুরু করলে ৬ কিলোমিটার কাজ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বিশ্বনাথ বাজারে অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে ১ কিলোমিটার খননকাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি।
এই নদীর সঙ্গে অনেক ছোট-বড় নদী, হাওর, বিল, খাল সংযোগ রয়েছে। বাসিয়া নদীর অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। শীত মৌসুমে পানির অভাবে কৃষিজমি পরিণত হয় মরুভূমিতে।
বাসিয়া নদী রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন বিশ্বনাথের পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বাসিয়া নদী রক্ষার দিকে নজর দিতে অনুরোধ করছেন অনেকে। তা না হলে বাসিয়া নদী একদিন হারিয়ে যাবে বলে আক্ষেপ করেন বিশ্বনাথের সচেতন জনগন।
উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, বিশ্বনাথে বাসিয়া নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮৭ জনের নামে মামলা চলমান রয়েছে (মামলা নং০৪/২০১৭)। কিন্তু প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও সেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এই মামলার বিরুদ্ধে দখলকারীরা হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেছেন (রিট মামলা নং- ৯১৩৫/২০১৭ ও ৫৩৪০/২০১৭ চলমান)।
বিষয়
সিলেট