গ্যাস লোড সঙ্কট নিরসনসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেট জেলায় আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত রোববার নগরীতে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, তেল-গ্যাসে ভরপুর সিলেট। আর সেই সিলেটবাসীকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে এ সম্পদ থেকে। এটা সিলেট বিদ্বেষী গভীর ষড়যন্ত্র। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও বিভিন্ন সময় গাড়ি পুড়ানো মামলায় শ্রমিকদের জড়িয়ে হয়রানি করাসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেট জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা অনিদিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন শুরু করবেন। প্রয়োজনে পুরো বিভাগ অচল করে দেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে আমরা অটল রয়েছি। আমরা আর মিথ্যা আশ্বাস বিশ্বাস করবো না, স্থায়ী সমাধান না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবো আমরা। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে প্রতি মাসের ১৮ থেকে ২০ দিন পর থেকেই ‘লিমিট’ শেষ হয়ে যায় সিলেটের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সিএনজিচালিত গাড়িগুলোর চালক। শুধু তাই নয়, সড়কের যানবাহন কম চলাচল করায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি মাসের শেষদিকে গ্যাস সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে সিলেটে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে চলছে এ চিত্র। এ কারণে মাসের শেষদিকে এলেই ফিলিং স্টেশনগুলোতে অরাজক অবস্থা দেখা দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও গ্যাস পান না পরিবহন চালকরা। সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিকরা জানিয়েছেন, লোড না বাড়ানোর কারণে মাসের শেষ ১০ দিন সিলেটের পাম্প মালিকরা চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারেন না। এ নিয়ে তারা বার বার গ্যাস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিক আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি। বরং দিন দিন সঙ্কট আরো তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিকরা নিয়মতান্তিকভাবে আন্দোলন শুরু করেন।
মালিকরা জানান, ২০০৭ সাল থেকে সিলেটে সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে পরিবহনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৫৬টি ফিলিং স্টেশন। গত এক দশক ধরে নতুন কোনো পাম্পের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে বর্তমানে সড়কে গাড়ি বেড়েছে চারগুণ। অথচ ২০০৭ সালের দেয়া লোড দিয়েই গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। তারা জানান, বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রতি ফিলিং স্টেশনের মালিকদের জন্য লোড নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বাইরে যেসব পাম্প গ্যাস বিক্রি করেন তাদের জরিমানার মুখে পড়তে হয়। এরপর থেকে ফিলিং স্টেশনের মালিকরা লোড বাড়ানোর জন্য বার বার দাবি জানালেও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রতি মাসের শেষদিকে ফিলিং স্টেশনের মালিকরা আতঙ্কে থাকেন। গ্যাস না পেয়ে অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। আমাদের দাবি নতুন করে লোড নির্ধারণ করা হোক। সমন্বয় না করলে ব্যবসায়ীরা আরো বেশি বিপদে পড়বেন।
এমন অবস্থায় যানবহন সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন। তারই ধারাবাহিকতায় স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সিএনজি গ্যাস মালিকদের লোড বাড়ানোর দাবীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে সিলেটে। গত কয়েক বছরে এ সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় মন্ত্রী ও এমপিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও সমাধান মিলছে না। বেশ কয়েক বার করা হয়েছে আন্দোলনও। সবই বিফল। ফলে বাধ্য হয়েই এবার কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় শ্রমিকদের জড়িয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা। এদুটি প্রধান দাবিসহ ৫ দাবিতে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সিলেটের পরিবহন শ্রমিক।