আজ পবিত্র শবে বরাত: আমাদের করণীয় ও বর্জনীয়


মাওলানা. নজমুল হুদা খান,মুহাদ্দিস, ফুলতলী কামিল মাদরাসা

শবে বরাত ইসলামের এক বিশেষ এবং মহিমান্বিত রজনী, যা প্রতি বছর শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাতে আসে। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন এবং ঘোষণা দেন যে, ক্ষমা, রিযক এবং বিপদমুক্তির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। তবে, মুশরিক বা হিংসুক ছাড়া সকল মুমিন বান্দা এর রহমত লাভ করতে সক্ষম। ইসলামী সাহিত্যে এবং হাদীসে এ রাতে বিশেষ গুরুত্ব এবং করণীয় আমলের ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।

শবে বরাতের রাতের বিশেষত্ব হাদীসে স্পষ্টভাবে এসেছে। এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে সকল সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া অন্য সকলের জন্য ক্ষমার ঘোষণাটি পাঠান। এর মাধ্যমে জানা যায়, এই রাতে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য শুধুমাত্র সৎ মনোভাব এবং আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। এক হাদীসে বলা হয়েছে:

يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
(আল্লাহ তাআলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সকল সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং মুশরিক বা হিংসুক ব্যতীত সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।)

অন্য এক হাদীসে এ রাতের বিষয়ে আরও বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে:

يطلع الله عز وجل إلى خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لعباده إلا لاثنين مشاحن وقاتل نفس
(আল্লাহ তাআলা শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) তাঁর সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করেন, তবে দু’টি শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করেন না। তারা হলেন— হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী এবং মানুষ হত্যাকারী।)

এ রাতে আমাদের জন্য কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যেগুলি পালন করলে আমরা আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলির মধ্যে একটি হলো অতিরিক্ত নামায আদায় করা। শবে বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সময় নামাযে অবস্থান করেছেন এবং মুসলিমদের জন্য এ রাতের নামাযের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এছাড়া, সালাতুত তাসবীহ নামাযও এই রাতে আদায় করা যায়। এটি এক বিশেষ নফল নামায, যা ৪ রাকআতে পড়া হয়।

কবর যিয়ারত এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা এই রাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন। কবরস্থানে গিয়ে মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করাও একটি মহৎ কাজ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কুরআন তিলাওয়াত। শবে বরাতে কুরআন তিলাওয়াত করা আমাদের জন্য একটি বিশেষ নেক কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতের মহিমা তুলে ধরেছেন এবং মুসলমানদের কুরআন তিলাওয়াত করতে উৎসাহিত করেছেন।

এই রাতে দুআ করারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই রাতে সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং ঘোষণাটি করেন যে, ক্ষমা চাওয়া সবার জন্য গ্রহণযোগ্য। সেই সাথে, যারা পাপী এবং অবাধ্য, তাদের জন্য এ রাতে আল্লাহর রহমত একান্তভাবে প্রয়োজন। রাসূল (সা.) বলেন:

إذا كان ليلة النصف من شعبان اطلع الله إلى خلقه فيغفر للمؤمنين والمؤمنات والشهداء
(শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুমিনরা, মহিলা এবং শহীদদের জন্য ক্ষমা প্রদান করেন।)

এ ছাড়াও, শবে বরাতে রোযা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। এটি মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ, যাতে তারা শুদ্ধতা এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারে।

শবে বরাতে কিছু কুসংস্কার এবং বিদআতও রয়েছে, যেগুলি পরিহার করা উচিত। এর মধ্যে আছে—অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি ফোটানো, কবরস্থান বা মাজারে মেলা বসানো এবং অন্যান্য অশুদ্ধ কর্মকা-। এসব কাজ ইসলাম সমর্থন করে না এবং এ ধরনের কর্মে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

শবে বরাত এমন একটি রাত, যা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমা লাভের সুযোগ। তাই, এই রাতে আমাদের উচিত সঠিক আমল করা, আল্লাহর রহমত কামনা করা এবং আমাদের আত্মার শুদ্ধি সাধন করা।

নবীনতর পূর্বতন