সিলেটের তিন গুণী শিল্পী একুশে পদকের জন্য মনোনীত

একুশে পদক ; বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানা। এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেটের তিন গুণী শিল্পী। গতকাল মঙ্গলবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

একুশে পদকের জন্য মনোনীত সিলেটের তিন গুনী শিল্পী হচ্ছেন- খ্যাতিমান সুরকার ও সংগীতশিল্পী বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব ও আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী।

বিদিত লাল ; সিলেটে জন্ম নেয়া এই লোকসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট, সিলেটের সুরমা নদীকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। সুরমার তরঙ্গের মতোই যেনো দূলায়িত তাঁর সুরের ভূবন। প্রিয় এই নদীর বুকে ভেসে ভেসে অসংখ্য গান তিনি সুর করেছেন। বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। " বিদিত লাল দাস ও তার দল" নামক সেই দলটি সত্তরের দশকের এক জনপ্রিয় দল ছিলো। সেই দলে ছিলেন আকরামুল ইসলাম, সুবীর নন্দী, রামকানাই দাশ, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক প্রমুখ অনেকেই। বিদিত লাল দাসই ছিলেন সেই দলের দলনেতা। ১৯৩৮ সালের ১৫ জুন সিলেটের শেখঘাটে সম্ভ্রান্ত জমিদার লাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লোকগানের শিল্পী ও সুরকার। বিদিত লাল হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, ও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক লোকসংগীত শিল্পীদের গানের সুর করেছেন। তিনি ১৯৬০ দশকের একজন গুনী বেতার শিল্পী ছিলেন। তার সুরকৃত গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো”, “সিলেট প্রথম আজান ধ্বনি”, “প্রাণ কান্দে মোর”, “মরিলে কান্দিসনে আমার দায়”, “সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী”, ও “আমি কেমন করে পত্র লিখি”। তিনি সিরাজউদ্দৌলা, দ্বীপান্তর, তপসী, প্রদীপশিখা, বিসর্জন, ও সুরমার বাঁকে বাঁকে নাটকের সংগীত পরিচালনা করেছেন। তার সফল্যের মধ্যে নজরুল একাডেমি পুরস্কার ও কলকাতায় ভারতীয় লোক সংবর্ধনা উল্লেখযোগ্য। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

শুভ্র দেব ; সিলেটের আরেক গুনী সংগীত শিল্পী । তিনিও সংগীতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। শুভ্র দেব সিলেট শহরের কাস্টঘর এলাকার বাসিন্দা। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। শুভ্র দেব ১৯৬৬ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে গান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানে গানের প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। শুভ্র দেব আশির দশকে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি আধুনিক রোমান্টিক গান গেয়ে থাকেন। তার প্রকাশিত প্রথম সংগীত অ্যালবাম ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’। অ্যালবামটি ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তিনি আরেকজন বাংলাদেশী গায়িকা শাকিলা জাফর ও ভারতীয় শিল্পী অলকা ইয়াগনিকের সাথে যৌথ গান গেয়েছেন। যে সমস্ত বাংলাদেশী শিল্পী এমটিভি’র তৈরি মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছেন, তিনি তাদের প্রথম দিকের একজন। তার টেলিছবি স্ত্রীর পত্র ২০০৩ সালে সেরা টেলিছবি হিসেবে ইউরো-বিনোদন বিচিত্রা পুরস্কার লাভ করে।

রূপা চক্রবর্তী ; সিলেটের একজন প্রখ্যাত আবৃত্তি শিল্পী। আবৃত্তি ক্যাটাগরিতে একুশে পদকের জন্য তিনিও মনোনয়ন পেয়েছেন। রূপা চক্রবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন।

নবীনতর পূর্বতন