এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার আমাদের সরাসরি শিক্ষক। ২০০৬ সালে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল (এম.এ) মাদ্রাসায় আলিম জামাতে ভর্তি হয়ে দেখি তিনি আমাদের ইতিহাসের পাঠ দিচ্ছেন। ক্লাসে স্যারের উপস্থাপনার ভংগি ছিল চমৎকার। স্যার যখন ক্লাস নিতেন তখন পিনপতন নিরবতা বিরাজ করত। সারাটি সময় জুড়ে স্যার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক ঘটনাবলি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতেন, যেন মনে হত আমরা সেই ঘটনাবলি সরাসরি অবলোকন করছি। এক কথায় স্যারের ক্লাস ছিল অতুলনিয়। শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় আদর্শ শিক্ষক। স্যার স্বপ্ন দেখাতেন বড় মানুষ হওয়ার জন্য । অনুপ্রেরণা দিতেন ভাল কাজের। বিভিন্ন সফল মানুষদের গল্প বলে তাদের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। সত্যিকার অর্থে ছাত্রদের জন্য তিনি ছিলেন এক প্রেরণার বাতিঘর।
আমাদের আল মামুন স্যার এখন হবিগঞ্জের জহুর চান বিবি কলেজের অধ্যক্ষ। খবরটা অত্যন্ত খুশির। আল মামুন স্যাারের মত একজন যোগ্য মানুষকে পেয়ে সেখানকার মানুষজনও নিশ্চয় আনন্দিত। তবে স্যারকে আমরা জকিগঞ্জবাসী আর আগের মত পাবো না, সেটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। কারন জকিগঞ্জে এসে তিনি এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে গড়ে তুলেছিলেন এক আত্মার সম্পর্ক। জকিগঞ্জও তাঁকে নিয়েছিল আপন করে। জকিগঞ্জে তিনি একখন্ড জমিও কিনেছিলেন বসবাস করার জন্য। এতসবের পর জকিগঞ্জের মানুষও তাঁকে ছাড়তে কষ্ট পাচ্ছে।
জকিগঞ্জের সাংবাদিকতার অঙ্গনে আল মামুন স্যার এক কিংবদন্তি নাম। জকিগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, প্রথমআলো, কালেরকন্ঠ সহ প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে। তাছাড়া সিলেটের দৈনিক সবুজ সিলেট সহ একাধিক দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকার সাথে ছিল ঘনিষ্ট যোগাযোগ। হাত মিলাও হাতে, জকিগঞ্জের উন্নয়ন একসাথে এই স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন জকিগঞ্জ নিউজ ২৪ ডটকম নামের নিউজ পোর্টাল। ২০১১ সালে আমরা যখন জকিগঞ্জ থেকে সবুজ প্রান্ত নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করি, তখন প্রথম যেই মানুষটার সাথে একান্ত পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা পাই, তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় আল-মামুন স্যার। স্যারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত পত্রিকা সরকারি রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে।
বারহালের এসনু বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদন করে এনে দিয়েছিলেন বীরঙ্গনার স্বীকৃতি। মাছ বাশ সুপারি জকিগঞ্জের বেটাগিরি শীর্ষক প্রতিবেদন জকিগঞ্জবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। স্যারের হাত ধরে জকিগঞ্জের অনেক মানুষ আজ সাংবাদিক পরিচয় ধারন করে আছে। সাংবাদিক, সংবাদপত্রকে তিনি সাধারণ মানুষের দ্বারে একদম ইজি ভাবে পৌছে দিয়েছিলেন। এর আগে আমরা জকিগঞ্জের সাংবাদিক হিসাবে হাতেগোনা দুএকজনের নাম জানতাম। যাই হোক জকিগঞ্জবাসীর সুখে দুঃখে পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি যেভাবে পাশে দাড়িয়েছিলেন, তা আমরা ভুলব না।
পরিশেষে স্যারের নতুন কর্মস্থল জহুর চান বিবি কলেজ আলোকিত হোক আমাদের প্রেরণার বাতিঘর আল-মামুনের আলোয় এই প্রত্যাশা করি।