সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত :::
জকিগঞ্জে রাত পোহালেই ভোট উৎসব। ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোটারগন নানা হিসাব নিকাশ শুরু করেছেন। এই প্রথম আলোচনায় নেই দলীয় প্রতিক নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল। যা জকিগঞ্জের ইতিহাসে অনন্য নজীর হয়ে থাকবে।
জকিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট বেশী থাকলেও এই প্রথম শক্তিশালী দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কারনে অস্তিত্ব সংকটে নৌকার প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দীন। তাছাড়া নির্বাচিত হয়ে পৌরবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেন নাই।
অপরদিকে পৌরএলাকায় দলীয় অবস্থান বেশ শক্ত না হলেও সর্বসাধারনের কাছে জনপ্রিয় থাকা জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদও বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী। তাছাড়া সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তিনি জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন তারপর মানুষ ভোট দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে, এখন মানুষ তাকে সংসদ সদস্য কিংবা আরোও উপরের কোন পদে দেখতে চায়! তিনি কেন নিচে নেমে এলেন?
মাঠ পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকা এবং ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে যেসব নেতাকর্মী মাঠে রয়েছেন তাদের বেশীরভাগই শুধুমাত্র পদপদবী রক্ষা ও লোক দেখানোর জন্যই কাজ করছেন। ভিতরে ভিতরে তারা অন্য স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
আগের মত পৌরএলাকায় জাতীয়পার্টির তেমন সমর্থক নেই। এবার লাঙ্গল প্রতিকে জাপার আব্দুল মালেক ফারুকও পৌরসভায় কিছুদিনের জন্য মেয়র ছিলেন। কিন্তু এবার নিজ গ্রাম হাইদ্রাবন্দে ধানের শীষের প্রার্থী ইকবাল আহমদ থাকায় ইমেজ সংকটে রয়েছেন তিনি। নিজের কেন্দ্রে কে বেশী জনপ্রিয়? দুজনের সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে পূরানো দ্বন্ধ রয়েছে। এজন্য এ নির্বাচনে বেশী কাবু করতে পারবেন না আব্দুল মালেক ফারুক।
গত নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের প্রতিক দেয়ালঘড়ি নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম। কিন্তু এবারের নির্বাচনে নিজদল খেলাফত মজলিস তাকে সমর্থন না দেয়ার কারনে স্বতন্ত্রভাবে হ্যাঙ্গার প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জানা যায় জকিগঞ্জে সোনার বাংলা সমিতির নামে সুদের ব্যবসায় জড়িত থাকার কারনে নিজ দল খেলাফত মজলিস তাকে সমর্থন দেয় নাই। তাছাড়া নিজ কেন্দ্রে ভোটে ভাগ বসাতে পারেন বিএনপির বিদ্রোহীপ্রার্থী এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা। হীরার পারিবারিক ও আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই গত নির্বাচনে জাফরুলকে সমর্থন দিয়েছিল।
এই নির্বাচনে সবচে বেশী আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত তিন মেয়রপ্রার্থী। তারা হলেন মোবাইল প্রতিক নিয়ে আনজুমানে আল-ইসলাহ সমর্থিত মাও. কাজী হিফজুর রহমান, নারিকেল গাছ নিয়ে সাবেক মেয়র আনোয়ার হোসেন সুনাউল্লার পুত্র আব্দুল আহাদ ও জগ প্রতিকে আ'লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ।
এ তিনজনের মধ্যে কাজী হিফজুর রহমান ও ফারুক আহমদ গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। গতবার কারচুপির মাধ্যমে হেরে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কাজী হিফজুর রহমান এবং তৃতীয় স্থানে ছিলেন ফারুক আহমদ। কিন্তু এবাবরে চিত্র ভিন্ন। একই ঘরানার তিনজন প্রার্থী থাকায় তেমন সুবিধা করতে পারবেন না আব্দুল আহাদ ও ফারুক আহমদ। তাছাড়া এ দুজন সহ নৌকারপ্রার্থী ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হীরারও ভোট একই কেন্দ্রে। মধুদত্ত কেন্দ্রে আহাদ ও ফারুক সমানে সমান থাকতে পারেন। সুতরাং নিজ কেন্দ্রে যিনি এগিয়ে থাকবেন তিনিই অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী কাজী হিফজুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন।
অপরদিকে গতবারের মত এবারও পৌরসভার পূর্বদিকে তিন তিনটি সেন্টারের একক প্রার্থী কাজী হিফজুর রহমান। তাছাড়া নিজের দল আল-ইসলাহ ছাড়াও খেলাফত মজলিস সহ সর্বস্থরের আলেম উলামার একক প্রার্থী তিনি। এই তিনটি সেন্টারে জয়ি হওয়ার পাশাপাশি খলাছড়া কেন্দ্রেও ভাল ভোট পাবেন। কারন খলাছড়া এলাকা আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের মুরিদিন মুহিব্বীন অধ্যুষিত। গত নির্বাচনে এই কেন্দ্রের প্রার্থী থাকার কারনে তেমন ভোট পড়েনি হিফজুর রহমানের বাক্সে। কিন্তু এবারে ফিল্ড খালি। সন্তোষ জনক ভোট পেতে পারেন ঐ কেন্দ্রে। তাছাড়া গন্ধদত্ত-নোয়াগ্রামের সেন্টারেও কোন প্রার্থী না থাকায় ভাল অবস্থান নিতে পারেন তিনি। সবমিলিয়ে এবার বিজয়ের দ্বরপ্রান্তে কাজী হিফজুর রহমান।
সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের এ পৌরসভার ৫ম নির্বাচন এটি। সুষ্ঠ, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৩ শতাধিক সদস্য নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখবেন পুরো শহরকে। ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে ব্যালট বাক্সসহ ভোট গ্রহণের সরঞ্জামাদি। তবে ব্যালট পেপার যাবে শনিবার সকালে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো.আব্দুন নাসের ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সাদমান সাকিব জানান, ৯টি কেন্দ্রে ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবেন। ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সকল কেন্দ্রে নজরদারী রাখবেন। র্যাবের ২টি, বিজিবির ২টি টহল দল সক্রিয় থাকবে মাঠে। ৩ শতাধিক সদস্য সক্রিয় থাকবে জকিগঞ্জে।
১৯৯৯ সালে গঠিত জকিগঞ্জ পৌরসভায় এবারের নির্বাচনে ১২ হাজার ৩৩৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮, সংরতি মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ নির্বাচনে।
এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে, ৩৩ জন কাউন্সিলর ও ৯জন মহিলা কাউন্সিলর লড়াই করছেন। দু’একজন ছাড়া বর্তমান কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই রয়েছেন ঝুকির মধ্যে। এসব ওয়ার্ডে নতুন মুখ দেখা যেতে বলে জানা গেছে।
রিটানিং অফিসার ও সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসার ফয়সল আমিন জানান, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশ বজায় রয়েছে। নির্বাচনের দিনও এমন সম্প্রীতি বজায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।