সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত :::
২৩মে (২৯ রামাদান) তারাবীহ নামাজের সময় জকিগঞ্জের আল্লামা ফুলতলী আবাসিক এলাকার লতিফিয়া জামে মসজিদে মারামারির ঘটনা সমাধানের পথে রয়েছে এবং মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জকিগঞ্জ পৌর আল-ইসলাহ'র সভাপতি মাও. কাজী হিফজুর রহমান বলেন, বিচারের একমাত্র শালিশ আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর নির্দেশে আজ উভয়পক্ষ তাদের দায়েরকৃত মামলা থানা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
মসজিদ কমিটির সুত্রে জানা যায়, জকিগঞ্জ পৌরসভার আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী আবাসিক এলাকার লতিফিয়া জামে মসজিদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন নিতে মাও. হোসাইন আহমদ দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিগত আট/নয় মাস পূর্বেও বিরোধ দেখা দিলে ফুলতলীর ছোট সাহেব (মাও. হুছামুদ্দীন চৌধুরী) বিচার করে সমাধান করে দেন। তারপর থেকে সবকিছু ঠিকটাক চললেও এই রামাদানে মসজিদের ইমাম কর্তৃক মহল্লার এক মুসল্লির সাথে তার বোনের বাড়ীতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে মাও. হোসাইন আহমদ ইমামের বিরুদ্ধে নানা তোহমত তোলে তার পিছনে নামাজ হবে না মর্মে ফতোয়া দেন এবং তাকে এতেকাফ ছেড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে একতরফা নির্দেশ দেন। এতে মসজিদ কমিটি ও মহল্লার মুসল্লিদের সাথে মাও. হোসাইন আহমদের বিরোধ আবারো দেখা দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটি ও মহল্লাবাসী ঈদের পরে সমাধানের সিদ্ধান্ত দেন এবং আপাতত মসজিদে অন্য দুজন আলেমকে নামাজ পড়ানোর জন্য ঠিক করেন। বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে মাও. হোসাইন সহ সকলে মেনে নেন।
কিন্তু তার পরের দিন কারো প্ররোচনায় নিজ গ্রাম বারগাত্তা ও হাইদ্রাবন্দ গ্রামের কতিপয় লোক নিয়ে তারাবিহের সময় মসজিদে এসে পুন:রায় মসজিদের ইমামকে এতেকাফ থেকে বের করে দিয়ে নিজে ইমামতির চেষ্টা করলে সাধারন মুসল্লিদের সাথে তার হাতাহাতি ও সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে মসজিদের মুসল্লি ও শাবিপ্রবি তালামীযের সাধারন সম্পাদক রেদ্বওয়ানুল হক শিমুল, জকিগঞ্জ উপজেলা আল-ইসলাহ'র সাবেক অফিস সম্পাদক নজরুল ইসলাম মারাত্মক আহত হন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে মাও. হোসাইনও কিছুটা জখম হন। আহত দুজন সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসার জন্য গেলেও মাওলানা হোসাইন রক্তমাখা জামা নিয়ে মসজিদের ভিতর শুয়ে থাকেন। এসময় হোসাইনের পক্ষের লোকজন মসজিদ কমিটির সভাপতি প্রিন্সিপাল মাও. নুরুল ইসলাম ও ভাইস প্রিন্সিপাল মাও. এখলাছুর রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কটুক্তি করেন। পরে জকিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল কাইয়্যুম থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ এনে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। কিন্তু ঘটনার পরে মাওলানা হোসাইন পরিকল্পিত ভাবে স্ব-দলবলে মিডিয়ার সামনে এসে মিথ্যা বয়ান দিলে জনমনে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
পরে মাও. হোসাইন জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাও. এখলাছুর রহমান, থানাবাজার মাদ্রাসার শিক্ষক মাও. মাসুক আহমদ ও জকিগঞ্জ উপজেলা আল-ইসলাহ'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহমদ কে হুকুমদাতা এবং আরো ৭ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, পৌর আল-ইসলাহ'র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাও. হাবিবুর রহমান শাহান, শাবিপ্রবি তালামীযের সাধারন সম্পাদক রেদওয়ানুল হক শিমুল, পৌর তালামীযের সহ-সভাপতি জুনেদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমদাদুল হক ইমন, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা ছাত্র সংসদের ভিপি ও অত্র মসজিদের ইমাম জসিম উদ্দীন প্রমুখ। পরবর্তিতে আহত নজরুল ইসলামের পক্ষ থেকেও তার ভাগনা বাদী হয়ে মাও. হোসাইন আহমদ গংদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরের দিন জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ জরুরী মিটিং ডেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং অবিলম্বে উগ্রপন্থি মাও. হোসাইনের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে মাদ্রাসার গভর্ণির বডির নিকট আবেদন জানান। নেতৃবৃন্দ হামলায় গুরুতর আহতদের দেখতে তাদের বাসায় যান।
তালামীযে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আহত রেদ্বওয়ানকে দেখতে তার বাসায় আসেন এবং দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবী করেন।
উপজেলা আল-ইসলাহ নেতৃবৃন্দও থানায় গিয়ে প্রকৃত ঘটনা পুলিশকে অবহিত করেন এবং ষড়যন্তমুলক আল-ইসলাহ নেতৃবৃন্দকে মামলায় ফাসানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
হামলায় আহত রেদ্বওয়ান ও নজরুল ইসলাম বর্তমানে তাদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্চেন।