করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে দেশের প্রতিটি সেক্টরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মুসলমানদের সাহায্য সহযোগীতায় পরিচালিত কওমী মাদ্রাসাগুলোও। একাধিক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের আয় কমে গেছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না।
সরকারী হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭ কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। তবে কওমী সংশ্লিষ্টদের দাবি, সারা দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তারা বলছেন। বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে এসব মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
আর্থিক সংকটে কওমী মাদ্রাসাগুলো:
কওমী মাদ্রাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান, ধর্মপ্রান মুসলমানদের যাকাত, ফেতরা, সদকা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করে না এসব মাদ্রাসা।
সাধারণত এসব মাদ্রাসার অনুদানের সবচেয়ে বড় অংশটি আসে রামাদান মাসে। কিন্তু এই বছর রামাদানে লকডাউনের ফলে মাদ্রাসাগুলোরও আয় হচ্ছে না, ফলে সেগুলো পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা কওমী মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা কে.এম মামুন সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্তকে বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ সাহায্য আসে বিদেশ থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে যারা আমাদের সাহায্য করবেন, তাদের নিজেদেরই আয় রোজগার নেই। স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যও বন্ধ, ফলে তাদের কাছ থেকেও তেমন সহায়তা আসছে না।’ ফলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কারও কারও বেতন বাকি পড়েছে। পরবর্তী সময়ে আয় হলে বেতন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জামিয়া মাদানিয়া পাঁচগ্রাম দারুস সুন্নাহ কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম মাও. জয়নুল ইসলাম সবুজ প্রান্তকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে যে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। আমার মাদ্রাসার ৫ জন শিক্ষকের প্রায় ৩ মাস থেকে বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে, দিতে পারছি না। আগে যারা সাহায্য সহযোগিতা করতেন, তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা সেভাবে করতে পারছেন না।’
সরকারী সহযোগিতা
বাসস-এর তথ্য অনুযায়ী, রামাদান উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ছয় হাজার ৯৫৯টি কওমী মাদ্রাসার জন্য ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেসব অর্থের বিতরণও শুরু হয়।
কিন্তু কওমী মাদ্রাসার ছয়টি বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেয় যে, রীতি মেনে তারা সরকারী এই অনুদান গ্রহণ করবেন না।
তবে মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক কওমী মাদ্রাসা সরকারী এই অনুদান গ্রহণ করেছে। একেকটি প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার করে টাকা পেয়েছে।
মাওলানা কে.এম মামুন সবুজ প্রান্তকে বলছেন, স্থানীয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে জকিগঞ্জ উপজেলার ৮ টি কওমী মাদ্রাসা যেগুলোর এতিমখানা সংযুক্ত আছে সে সব প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৯৫ হাজার টাকা সরকারী সহযোগীতা পেয়েছে।
তবে উপজেলার বাকী ৪০ টি কওমী মাদ্রাসা কোনো সরকারী বেসরকারী অর্থ সহায়তা পায়নি।
পরিস্থিতি কীভাবে সামলাচ্ছে কওমী মাদ্রাসাগুলো:
জকিগঞ্জ পৌরসভার দারুল হুফফাজ নুরানী কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সংকট তো আর চিরদিন থাকবে না। আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি একটু ধৈর্য ধারণ করার। পরিস্থিতি ভালো হলে নিশ্চয়ই সবকিছু আবার আগের মতো হবে।’
জকিগঞ্জ পৌরসভার দারুল হুফফাজ নুরানী কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সংকট তো আর চিরদিন থাকবে না। আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি একটু ধৈর্য ধারণ করার। পরিস্থিতি ভালো হলে নিশ্চয়ই সবকিছু আবার আগের মতো হবে।’
বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বেশিরভাগ মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়ি বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। শিক্ষকদের আংশিক বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা পরবর্তী সময়ে দেওয়া হবে।
এসব মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ আশা করছে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার স্থানীয় সাহায্য-অনুদান পেতে শুরু করবেন এবং তাদের সংকট কেটে যাবে।