সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত ::::
লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত জকিগঞ্জ উপজেলার বালাউট গ্রামের দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত পীরে কামিল প্রিন্সিপাল আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি ছাহেব (রহ.)।
শুক্রবার বিকেল ৩ টায় রতনগঞ্জ হ্যালিপ্যাড মাঠে তাঁর জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছেলে মাওলানা উবায়দুর রহমান। জানাযার পূর্বে স্মৃতিচারন করে মরহুমের জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মুর্শিদে বরহক আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড়ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী, শায়খুল হাদীস আল্লামা হাবিবুর রহমান, আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যন লোকমান উদ্দীন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যন মাসুক উদ্দীন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যন মাও. আব্দুস সবুর, জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মোঃ আব্দুন নাসের, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যন মোস্তাকিম হায়দার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ রশীদ বাহাদুর প্রমুখ।
মরহুম বালাউটি ছাহেবের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আধ্যাত্মিক জীবন তথা জীবনের সকল পর্যায়েই ছিল এক মহান আদর্শের প্রতিকৃতি। তাঁর ইন্তেকালে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুরিদীন-মুহিব্বিন তথা জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই শোকে সন্তপ্ত।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি।পিতা-মরহুম মো. রছমান আলী, মাতা-মোছাম্মাত জয়নব বিবি। তিনি ১৯৪৩ ইংরেজি সালের ১৫ই মে সিলেট জেলাধীন জকিগঞ্জ উপজেলাস্থ ৩নং কাজলসার ইউনিয়নের বালাউট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৩ভাই ৩বোনের মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন পিতামাতার কাছে। মক্তব শেষ করে ১৯৪৭ইং সালে সড়কের বাজার আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৪৯ ইং সালে বাড়ির নিকটস্থ হাড়িকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর ইছামতি দারুল উলূম কামিল (এম.এ) মাদরাসা থেকে ১৯৫৬ ইং সালে দাখিল এবং ১৯৫৮ ইং সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উক্ত মাদরাসা থেকে ১৯৬০ ইং সালে ফাজিল পাশ করে ভর্তি হন সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় এবং ১৯৬২ ইং সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কামিল উত্তীর্ণ হন।
তিনি ১৯৬০ইং সালে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল (এম.এ.) মাদরাসায় খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬২ইং সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানেই প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে কর্মজীবনের সূচনা ঘটিয়ে ১৯৭৫ইং সাল পর্যন্ত দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। ১৯৭৬ইং সাল থেকে ১৯৮২ইং সাল পর্যন্ত আটগ্রাম আমজদিয়া মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮২ইং সাল থেকে জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৮ইং সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ কর্মবীর ১৯৯০ইং সালে সিলেট জেলা শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ১৯৯৩ইং সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমীতে(নায়েম) প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি অন্ত “শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ” সম্মানে ভূষিত হন।পারিবারিক জীবনে ১১পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক তিনি।
অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ, শামসুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.)-এর কাছ থেকে ১৪৮৭ হিজরী সনে ইলমে কেরাত এবং ১৯৭১ইং সালে তরিকত বা আধ্যাত্মিক সাধনার সনদ লাভ করেন।তিনি একজন ইসলামি দার্শনিক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত খানকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে করেছে জননন্দিত।