লেডি এডুইনার পরকিয়া ও আসামের নাগরিক তালিকা

মাহমুদ রহমান ::::
পরকিয়াকে বলা হয় দায়-দায়িত্বহীন প্রেম। শুধুই আনন্দ উপভোগ, একে অন্যের প্রতি এর বাইরে কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে এই প্রেম বিড়ম্বনায় রূপান্তরিত হয় যখন অবৈধ প্রণয়ে সন্তান চলে আসে; তখন প্রেমিক এই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চায়না। আসামের নাগরিক পঞ্জির কারনে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন নাগরিককে ভারত তার সন্তান হিসেবে অস্বীকার করায় এই পরকিয়া বিষয়ক চিন্তা মাথায় এল।

১৯৪৭ সালে সিলেট পাকিস্তানের সঙ্গে এসেছিল গণভোটের মাধ্যমে। গণভোটে অংশগ্রহন করে সিলেটের মানুষ রায় দিয়েছিল তারা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায়। ৪৭ এর পথ ধরে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সিলেট আজ বাংলাদেশের অংশ। ঐ সময় আজকের আসামের করিমগঞ্জ, বদরপুর, হাইলাকান্দি ও রাতাবাড়ির মানুষও সিলেটের সঙ্গে তথা পাকিস্তানের অংশ হতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই সুযোগ পায়নি। সেই সুযোগ পেলে আজকে তারাও বাংলাদেশে থাকতো। বিজেপির রাজনীতির শিকার হয়ে নাগরিক পঞ্জির নামে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না।

প্রশ্ন হচ্ছে, সিলেট পারলেও কেন ওই সাড়ে তিন থানা পারলো না? এ বিষয়টি অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন। তবে অনেকেই এটাকে জওহরলাল নেহরু ও ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী লেডি এডুইনার অনৈতিক রিলেশনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। পন্ডিত নেহরুর কারনে লেডি এডুইনা বাউন্ডারি লাইন নিয়ে যারা কাজ করছিল তাদেরকে প্রভাবিত করে অন্যায্য সীমানা নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পেরেছেন বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। জনরায়কে উপেক্ষা করে সিলেটের অনেক অংশকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। বয়স্কদের এসব আদিরসাত্মক গল্প এক সময় মানুষের ফিসফিসানিতে ছিল।

কিন্তু কয়েক বছর আগে লেডি এডুইনার মেয়ে পামেলা যিনি ১৯৪৭ সালে মায়ের সঙ্গে ১৭ বছরের মেয়ে হিসেবে ভারতে ছিলেন তিনি একটি বই লিখে দিনের আলোতে নিয়ে আসেন। পামেলা তার মায়ের সঙ্গে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। তাদের মধ্যে গভীর প্রেম থাকলেও তিনি মনে করেন তারা শারিরীকভাবে মিলিত হতে পারেননি পুলিশ ও জনগনের ভীড়ে একজন আরেকজন একা না পাওয়ার কারনে। ভারত থেকে যাওয়ার সময় লেডি এডুইনা তার পান্নার আংটিটি দিয়ে যান পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর মেয়ে ভারতের পরবর্তী প্রধামনমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকে।

নেহরু কন্যাকে দেয়া পান্নার আংটি নিয়ে আসলে কারো  কোনো কথা নেই। কথা হচ্ছে গভীর প্রেমের বলি হয়ে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেয়া আসামের এলাকা নিয়ে। ভারত জমিগুলো চায় তাদের সীমানার অংশ হিসেবে। কিন্তু জমির ভূমিপুত্রদের চায়না তাদের নাগরিক হিসেবে রাখতে। ঠিক যেমন পরকিয়া প্রেমে প্রেমিকাকে চায় লম্পট পুরুষ গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখতে কিন্তু এই জড়াজড়ির ফসল সন্তানকে তার পরিচয়ে বড় হতে দিতে চায়না।
____________
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, বিশিষ্ট কলামিস্ট

নবীনতর পূর্বতন