সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত ::::
রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আহলে বাইতকে ভালবাসা ঈমানের দাবি। কারবালার হৃদয়-বিদারক ঘটনায় মুসলিম মাত্রই শিহরিত হয়। কিন্তু শিয়া সম্প্রদায় এ বিষয়ে চরম বাড়াবাড়ি করে বিভ্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে শিয়াদের উত্থান দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ কী, জানেন? কারণ হল বাঙালিরা অতি আবেগপ্রবণ।ইমোশনে হিট করে কেউ কিছু বললেই তা মেনে নেন; শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন না।
শিয়ারা আহলে বাইত এর প্রতি ভালবাসার হাদিসসমূহকে অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যাসহ সরলপ্রাণ মুসলিমদের সামনে পেশ করে। তারা মুসলিমদের বুঝাতে চেষ্টা করে যে,আহলে বাইতকে তারাই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।আবেগতাড়িত হয়ে মানুষ তাদের কর্মকাণ্ডে যোগ দেয়।শরয়ি জ্ঞান না থাকায় পর্যায়ক্রমে তারা ব্রেইন ওয়াশের শিকার হয়ে শিয়ায় পরিণত হয়।
আমি নিজে দেখেছি আমাদের আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী লোকজন শিয়াদের দুরভিসন্ধি বুঝতে না পেরে এমন কিছু কাজ করেন যা আকিদা-বিধ্বংসী ও ভণ্ডামী।
নিম্নে এরকম কিছু ভণ্ডামীর উদাহরণ দিচ্ছি:
১। তাজিয়া বানানো ও তাজিয়া মিছিল করা।
২। বুক চাপড়িয়ে ইয়া হুসাইন ইয়া হুসাইন বলে নিজেকে আঘাত দেওয়া।
৩। শরীর ক্ষত বিক্ষত করা।
৪। গণ্ডাদেশ জখম করা ও বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা।
৫। জাহিলী সব কথাবার্তা বলা।
৬। তরবারী দিয়ে মাথায় ও পিঠে আঘাত করে রক্ত বইয়ে দেযা।
৭। মহররমের দশদিন শোক পালন করণার্থে নিরামিষ খাওয়া।
৮। জারি গান ও মাতম করা।
কারবালাকে কেন্দ্র করে সমাজে এরকম বেশ কিছু হারাম কাজ প্রচলিত রয়েছে। শিয়াদের কয়েকটি দল এ দিনকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে। তাদের দাবী, এভাবে তারা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করে। এরা নিজেদের তাঁর একান্ত ভক্ত ও অনুসারী বলেও দাবী করে। মিডিয়াগুলোও এমনভাবে প্রচার করে যেন তারাই একমাত্র আহলে বাইত বা রাসূল-পরিবারের ভক্ত। যারা তাদের মতো কাজ করে না তারা আহলে বাইত-এর ভক্ত নয়। এটা একদম নির্জলা মিথ্যাচার। কারণ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই তো আহলে বাইতকে সর্বাধিক ভালোবাসে। কিন্তু তারা ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে শরীয়ত লঙ্ঘন করে না।
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা আহলে বাইতকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি,তাদের আদর্শ অনুসরণ করি।এতে বাড়াবাড়ি করি না,শরিয়ত লঙ্ঘন করি না।।আমরা এযিদ বন্দনাও করি না।
নিচের দুটো হাদিস লক্ষ্য করুন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻄَﻢَ ﺍﻟﺨُﺪُﻭﺩَ، ﻭَﺷَﻖَّ ﺍﻟﺠُﻴُﻮﺏَ، ﻭَﺩَﻋَﺎ ﺑِﺪَﻋْﻮَﻯ ﺍﻟﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ » ‘
সে আমাদের উম্মতভুক্ত নয়, যে গালে আঘাত করে, বুকের কাপড় ছেঁড়ে এবং জাহেলী কথাবার্তা বলে।
[বুখারী : ১২৯৪, মুসলিম : ১০৩]
বুখারী ও মুসলিম রহ. আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺮِﻱﺀٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺑَﺮِﺉَ ﻣِﻨْﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، « ﻓَﺈِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﺮِﺉَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﻘَﺔِ، ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﻟِﻘَﺔِ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻗَّﺔِ »
‘আমি তাদের থেকে মুক্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের থেকে মুক্ত। আর সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শোকে) মাথা মুণ্ডনকারিণী, বিলাপকারিণী এবং বুক বিদীর্ণকারিণী থেকে মুক্ত।[বুখারী : ১২৩৪, মুসলিম : ১০৪]
কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.) শহিদ হয়েছিলেন ইসলামের স্বার্থে।তাই কারবালার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইসলামের খিদমতে নিজেদের বিলিয়ে দিব,এটাই ইমাম হুসাইন (রা.) এর রক্তের দাবি।
হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা হুসাইন (রা) এর প্রতি। হৃদয়ের সব ঘৃণা তাদের প্রতি, যারা হযরত হুসাইন(রা) কে কষ্ট দিয়েছে।
.........................................................
লেখক : বিসিএস ক্যাডার (শিক্ষা), প্রভাষক- মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ।