প্রসঙ্গ কাশ্মীর, আমার উপলব্ধি : আবদুল আউয়াল হেলাল

ইঙ্গ- ভারতীয় কুটচালে ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দে শৃঙ্খলবদ্ধ হয় কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার।বিগত বাহাত্তর বছরে কত হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত রক্ত আর অশ্রুর স্রোত বয়ে গেছে ভূস্বর্গ জুড়ে তার ইয়ত্তা নেই। বহু দেন দরবার, বহু ত্যাগের পর ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ যোগ হয়েছিলো। এই অনুচ্ছেদ বলে কাশ্মীরি জনগণের মোটামুটি স্বায়ত্ব শাসন নিশ্চিত করা হয়েছিলো। বর্ণবাদী মোদী সরকার কাশ্মীরবাসির সে মর্যাদাটুকুও কেঁডে নিলো। মূলত: মোসাদ’র প্রসক্রিপশনেই চরম বর্ণবাদী মুসলিম বিদ্বেষী মোদী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ পৌনে এক শতাব্দী ধরে সব রকমের জুলুম নির্যাতন চালিয়েও বাগে আনা যায় নি কাশ্মীরের সংখ্যাগুরো স্বাধীনচেতা মুসলিম জনগণকে। কাশ্মীরিদের বাগে আনতে হলে এখন তাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে হবে। কিন্তু সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের একটি ক্লজ সে পথে অন্তরায়, যে ক্লজে বলা হয়েছে জন্মগতভাবে কাশ্মীরি নয় এমন কেউ কাশ্মীর ভূখণ্ডে জায়াগা জমি কিনতে পারবে না। অকাশ্মীরি কেউ সেখানে ভোটাধিকারও পাবে না। এই মুহুর্তে কাশ্মীরি মুসলমানদের দমন করতে দরকার জনমিতিক যুদ্ধ। জনমিতিক যুদ্ধটা হলো জায়নিস্টদের প্রজেক্ট। এ যুদ্ধের মৌল দিক হলো - চরম নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে একটি ভূখণ্ডের মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। সে ভূখণ্ডের নিরুপায় মানুষের ফেলে যাওয়া ঘর বাড়ি, জায়গা জমি দখল করে নিজেদের লোকদের কাছে হস্তান্তর করে সেখানে স্থায়ী বসতের ব্যবস্থা করা। ফলে সে ভূখণ্ডের আদীবাসিন্দারা অধিকাংশ হবে বাস্তুহারা। আর নির্যাতনের ষ্টীমরুলার বুকে চেঁপে যারা থেকে যাবে তারা হবে চরম নিগৃহীত সংখ্যালঘু ।জায়নবাদিরা তাদের ঘৃন্য সে প্রজেক্ট ইতোপূর্বে ফিলিস্তিনে বাস্তবায়ন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদেরও উচ্ছেদ করা হয়েছে জনমিতিক যুদ্ধের একই প্রজেক্টের আওতায়। বর্ণবাদী মোদী সরকার কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর এখনই শুরু করবে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম নিপীড়ন নির্যাতন। এই নিপীড়নে যারা বাধ্য হয়ে কাশ্মীর ত্যাগ করবে তাদের ঘর বাড়িতে বসত শুরু করবে অন্যান্য প্রদেশ থেকে আসা বর্ণবাদী হিন্দুরা। এই দখলদারি বসত প্রক্রিয়াকে ভবিষ্যতে সাংবিধানিক বৈধতা দিতেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে।

কাশ্মীর ইস্যুতে বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে আবারও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। দু’দেশের সীমান্তে হাল্কা গোলাগুলি বিনিময়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এরই পথ ধরে যেকোন সময় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে দুই দেশ। পৃথিবীর যে প্রান্তে যে দেশেই হোক আমরা সর্বাবস্থায় যুদ্ধ বিরোধি। আমরা যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। কিন্তু আমরা জালিম নয় বরং মজলুমের পক্ষে। কাশ্মীরে ভারতের অবস্থান বরাবরই জালিম হিসেবে চিহ্নিত এবং প্রমানিত। তাই আমরা কাশ্মীরি মজলুম মুসলিমদের পক্ষে, জালিম ভারতের বিপক্ষে সবসময় সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৬ খ্রীস্টাব্দের ৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি রিপোর্ট নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ ভারতের পক্ষে থাকবে। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে ভারতের যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ নয় বরং আওয়ামীলীগ ভারতের পক্ষে থাকতে পারে। তবে এখানে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী, সমর্থকদের পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই; কাশ্মীর ইস্যুতে যদি ভারতের পক্ষে অবস্থান করেণ তবে আপনারা কেবল আম্ভন্তরিণ জালিমই থাকলেন না, বরং আন্তর্জাতিকভাবে জালিমের সহযোগি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। আপনাদেরকে মানবতার কথা শোনিয়ে লাভ নেই তা জানি। তবে সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের যে শ্লোগান আপনারা দেন কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করা তা সর্ববৈ মিথ্যা বলে প্রমানিত হবে। দেখুন কাশ্মীর ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান কী ছিলো। কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু রোজনামচা লিখেছিলেন, যা কারাগারের রেজনামচা নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু বলে যারা মুখে ফেনা তুলেন একটু সময় করে পড়ে দেখতে পারেন।

১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দ। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত পাকিস্তানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ১৩ জুলাই ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দ তিনি লিখেছেন-

ভারতের উচিত ছিল গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার মেনে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি করে নেওয়া। তখন পাকিস্তান ও ভারত সামরিক খাতে ব্যয় না করে দুই দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারত। দুই দেশের জনগণও উপকৃত হত।

ভারত যখন নিজেদের গণতন্ত্রের পুজারী মনে করে তখন কাশ্মীরের জনগণের মতামত নিতে আপত্তি কেন করছে ? এতে একদিন দুটো দেশই ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে বাধ্য হবে।
[কারাগারের রোজনামচা , পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬০]

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ লেখক পরিষদ।
নবীনতর পূর্বতন