মাও. মঞ্জুরে মাওলা :::
নিজের চারপাশে আলো জ্বালিয়ে। তারপর গোটা বাংলাদেশ আলোকিত করে তুললো হাই ভোল্টেজের কিছু নক্ষত্র। এরা সব আলোয় ভরা তারকারাজি। এঁদের উদয়স্থল কই? উৎস কোথায়? তা হলো সিলেটের রত্নগর্ভা জকিগঞ্জ। এই মাটির ধুলোবালি মেখে তারা নিজেকে প্রস্তুত করেন। এরপর হয়ে যান আলোর শক্তিমান স্ফুলিঙ্গ। ছড়ান স্থানীয় জনপদে আলোর উষ্ঞতা। তারপর দেশের বিস্তৃত মানচিত্রের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বময় ছড়ান তারা জ্ঞানের ঝমকালো ফোয়ারা। খতীবে মিল্লাত আল্লামা ওবায়দুল হক, আল্লামা ফুলতলী সাহেব কিবলাহ ছিলেন এই মাটিরই এমন তেজস্বী নক্ষত্র।
জকিগঞ্জের উর্বর মাটিতে জন্ম নেয়া এই সব ওলামায়ে কেরাম ছিলেন লক্ষ জনতার শেল্টার-আমব্রেলা। অজস্র মানুষ আশ্রয় নিতো তাঁদের ছায়ায়। হযরত আব্দুল গাফফার মামরখানি, আব্দুল জব্বার রায়পুরী, ওবায়দুল হক উজিরপুরী, আবদুল গনী হাড়িকান্দি, আব্দুল জব্বার গোটারপ্রামীর মতো রত্নরা তাই শুধু জকিগঞ্জ নয় ছিলেন এক কোটি সিলেটবাসীর আশ্রয়ের নিরাপদ ছাতা। এই কওমের বটবৃক্ষ।
দেশের সব চেয়ে ধর্মপ্রাণ এলাকা সিলেট। এই সিলেটের ধর্মীয় শিক্ষার সুতিকাগার জকিগঞ্জ। কিন্তু, সেই আলোকিত জকিগঞ্জের নক্ষত্রের গ্যালাক্সী এখন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। মাত্র কয়েকটি তারা ছাড়া বাকী যেন সব শুন্য। নামের তারকা আছে অনেক, কিন্তু আলো নেই তেমন। শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকাদ্দাস আলী হাফিজাহুল্লাহু এবং শায়খুল হাদীস আল্লামা হাবীবুর রহমান মাদ্দাজিল্লুহু- এই গ্যলাক্সীর বর্তমান দুই আলোময় নক্ষত্র। আমাদের মুল্যবান সম্পদ। কিন্তুু, দু'জনই যেনো ধুলো-বালির পৃথিবী ছেড়ে মনি-মুক্তার জান্নাতে চলে যেতে ব্যাকুল। তাদের কাছে দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতই যেন বেশী প্রিয়। কাছে গেলে মনে হয় যেন তাঁরা আসমানী দাওয়াতের ইনতেযারেই রয়েছেন এখন।
যাই যাই করে একদিন সত্যিই তো চলে যাবেন!
সেদিন আফসোস করবো। হায়, থাকতে কেনো একটি বার মন ভরে, দিল ছুঁয়ে, সোহবত পেতে, খেদমতে হাজির হলাম না! এমনি এক মানসিক অবস্থা আর দুরুদুরু চিন্তা নিয়ে সেদিন হাজির হলাম জকিগঞ্জের কৃতি সন্তান, সিলেটের গৌরব, বাংলাদেশের সম্পদ, শায়খুল হাদীস আল্লামা হাবিবুর রহমানের দরবারে। তিনি একাধারে আমার উস্তাদ। আমাদের উস্তাদ। আমার পিতার উস্তাদ। হাজার আলেমের উস্তাদ। আমার দাদার যুগপৎ শ্রদ্ধার ও স্নেহের পাত্র। আমাদের বাড়ির মাটি, পথ-ঘাট, গাছপালা সবই যার স্মৃতিধন্য। তিনি ইছামতি কামিল মাদরাসার দীর্ঘকালের প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস। সৎপুর কামিল মাদরাসা ও ফুলবাড়ি মাদাসায় অধ্যাপনা করেন অনেক বছর। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মসজিদের খতীব ও সেখানকার আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। দ্নীনি দাওয়াতের মিশন নিয়ে তিনি সৌদী আরব, মরক্কো, মিশর, কাতার, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিরিয়া সফর করেন। তাঁর কর্মময় জীবনের ফিরিস্তি দীর্ঘ। কিন্তু মানুষের কাছে তার সব চেয়ে বড় পরিচয় এই যে, ব্যক্তি জীবনে তিনি সুন্নতে রাসুলের পাবন্দ, জ্ঞান-পন্ডিত এক বুযুর্গ এবং ভিন্ন মতের ওলামাদের ওপর আজীবন শ্রদ্ধাপোষণকারী এক প্রচার বিমুখ নিরহংকার সাধক। তিনি মাসিক শাহজালালের সম্পাদক। গভীর জ্ঞানের লেখক-গবেষক এবং অসংখ্য মৌলিক গ্রন্থ রচয়িতা।
হুজুরের একান্ত সহচর ও খাদেম জনাব হাফিজ নঈম উদ্দীন সাহেবের নিকট থেকে তাঁর দৈনন্দিন সময়ের তরতীব জেনে জকিগঞ্জের নিকটবর্তী রারাই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। আসরের আজানের খানিক আগে গিয়ে রারাই পৌছি। বাড়ির প্রবেশ পথের সন্নিকটেই দেখলাম নব্য প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও নির্মানাধীন পাঠাগার-কাম সংস্কৃতি কেন্দ্র। গরমের মৌসুম। তাই, আজান না হলেও ক্লান্তি দূরিকরণে মসজিদের স্বচ্ছ জলাশয়ের শান বাধানো ঘাটে বসে আয়েশি আদলে ওজু সেরে পথের ধুলো-বালু ও শ্রান্তি দূর করে নিলাম।
তারপর এক বালককে রাহবার বানিয়ে ভয়, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা মিশ্রিত অন্যরকম এক অনুভুতি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা দেই। উঁচু পাচিল ও প্রবেশ ফটক পেরিয়ে নজরে আসে এক সারি ঘর। যার বাম পাশের অংশ সাধারন মেহমান, বাড়ির নিয়মিত লোকজন ও অন্যান্যদের বিশ্রাম, বৈঠক, খাওয়া-দাওয়ার কাজে এবং ডান পাশের অংশ হুজুরের ব্যক্তিগত-পারিবারিক লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাকে ধারণা দেয়া ছিলো মোটামুটি সুস্থ থাকলে লাইব্রেরীতেই হুজুরের সাক্ষাত মিলবে। কিন্তু আনফর্চুনুটলি ঐদিন অসুস্থ থাকায় তাঁকে কুতুবখানায় পেলাম না। ব্যাপার কঠিন হয়ে গেলো মুহুর্তেই। ভাবতে না ভাবতে দৃষ্টিতে ভাসলো হুজুরের ছোট সাহেবজাদা মাওলানা আব্দুল বাকী খালেদ চেহারায় মুচকি হাসি টেনে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। মুসাফাহা, মুআনাকা সেরে বললেন, মনজুর ভাই, বহু বছর যাবত আমাদের ভুলে আছেন আপনি! আপনার ও আপনার পরিবারের ভালোমন্দ খবর আমরা রাখি। কিন্তু আপনি যে ভুলেই আছেন আমাদের। বিনা বাক্যে অনুযোগ স্বীকার করে বললাম, এই সবের ক্ষমা চাইতে আর দোয়া নিতে হুজুরের খেদমতে এসেছি। জানেন তো প্রবল বাতাস আর প্রচন্ড ঝড়-তুফানে নিমজ্জিত ছিলাম অনেক দিন! হুজুর ইদানিং কেমন আছেন, আমি কি সাক্ষাৎ পাবো?
-"আমরা সবই জানি। আর আপনার উপর তো সকলেরই দোয়া আছে অনেক। আব্বা আজ অসুস্থ। তবে আপনার সালাম আমি বলে আসি।"
খালেদ ভেতরে গেলেন। এরই মধ্যে আজান হয়ে গেলো। আমি চিন্তা করলাম, দেখা তো হবেই। তবে সুস্থ দেখা আর অসুস্থ দেখার ফলাফল ও তৃপ্তির পার্থক্য অনেক। খালেদ ফিরে এসে বললেন, আব্বা মসজিদে যেতে পারবেন না। আপনার সংবাদ ও সালাম পৌছিয়েছি। বললাম, তাহলে আমরা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসি।
মসজিদের চমৎকার আউটসিন আগে দেখলেও এবার ভেতরে প্রবেশ করে আরো মুগ্ধ হলাম। একদিকে মসজিদের চমৎকার নির্মাণ শৈলী। অন্যদিকে মুসল্লীদের গ্রুপ চরিত্র। বড়সড় মসজিদের পুরো দেড় কাতার মুসল্লীর সবাই একই বাড়ির বাসিন্দা। হুজুরের পরিবারের। আরো তাক লাগানো মজার বিষয়, এদের সকলেই আলেম। না হয় মাদরাসার মুতাআল্লিম। ৫০ বছর ধরে এ বাড়ির কোন সন্তান (মাদরাসার পরিবর্তে) স্কুলে যায়নি। যায় না। সম্ভবত যাবেও না। শুধু মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে এই জামানায় যে সসম্মানে খেয়েপরে ভালো ভাবেই বাঁচা যায়-যারা এ বিষয়ে সন্দিহান, তারা একবার সশরীরে দেখেও আসতে পারেন। নামাজ পর দেখা হলো ইছামতি মাদরাসায় আমার কৈশোরের আদর্শ উস্তাদ, হুজুরের ভাতিজা, প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের সাথে। তিনি আমাকে দেখে খুশী হলেন। আমি যারপর নাই মুগ্ধ-আনন্দিত হলাম। ইছামতি মাদরাসায় পড়ুয়া অনেকে এসে কুলোকুলি করলেন। আমার পরণে লম্বা জুব্বা। কওমী স্টাইল। দেখতে ভিন্ন ঘরানার কিন্তু আচরণ ঘনিষ্টতায় একই পরিবারের। সাংঘর্ষিক দৃশ্যে নতুন, অপরিচিত ও ছোটরা কৌতুহলী চোখে বার বার শুধু তাকাচ্ছিলো।
নামাজ পর সকলে জটলা পাকানো অবস্থায় হেটে হেটে বাড়িতে গেলাম। ভেতরের ঘরের এক রুমে (ফটিকে) বসানো হলো। খানিক পর খালেদ ভাইর কাঁধে ভর দিয়ে হুজুর ঐ রুমে আসলেন। আমি সবিনয় মুসাফাহা করলাম। ইশারায় বসার হুকুৃম করে তিনিও বসলেন। প্রথমেই ক্ষীণ কন্ঠে তাঁর শাগরিদ, আমার সদ্য মরহুৃম আব্বা ও ভাই মাহফুজে মাওলার প্রসংগ টানলেন। বাড়ির সংবাদ জানলেন। ধীরে ধীরে কথা বাড়লো। কন্ঠ স্পষ্ঠ হয়ে এলো। আরো যিয়ারতকারী ছিলেন। অবাক হলাম, আলাপ, হালপুরসীর প্রায় সবটুকু আমার সাথেই হচ্ছিলো।
আমি আমার ইলমী-আমলী তরক্বীর জন্য নসীহত চাইলাম। হুজুরের সংকলিত দালাইলুল খাইরাতের একটি নুসখা সাথে নিয়ে গিয়োছিলাম। এই কিতাবের অজিফাসমুহ আমলের দোয়া ও ইজাযত চাইলাম। কিছু নসীহত-ওসীয়ত শেষে দালায়িলুল খাইরাতের ঐ কপিতে লিখিত ইজাযত দিলেন। নসীহতসমুহ শুনলাম কান পেতে। এ সময় আমার কল্পনার সেলুলয়েড বিদ্যুৎ বেগে অনেক পেছনে দৌড়াতে লাগলো। আমি দিব্যি চোখে ফিরে দেখি, ১৯৮৮ সাল। জালালাবাদ ক্যন্টনমেন্ট গ্যারিসন মসজিদে এ বছর ১ম বার তারাবীর নামাজ পড়াই। ২৭ রমজান বিকালে বাড়ি পৌছি। মুহাদ্দিস সাব হুজুর ইছামতি মাদরাসা মসজিদে ছিলেন ই'তিকাফে। গ্রামের মসজিদে তারাবীহ আদায়ের পর আমার পিতা নিজ সন্তানকে সাথে নিয়ে গেলেন তাঁর উস্তাদের কাছে। যেনো বলতে চাইলেন, দেখুন আপনার শাগরিদ তাঁর সন্তানকে হাফিজে কুরআন বানিয়ে আবার তার ওস্তাদের হাতে তুলে দিতে এসেছে। নির্দেশ পেয়ে আমি সুরা ক্বাফ থেকে কিছু তিলাওয়াত করলাম। খুশি হয়ে হুজুর ডেকে নিয়ে বুকে জড়ালেন। আদর ও দোয়া দিলেন। আজ প্রিয় বাবা নেই, কিন্তু তাঁর সম্মানিত সেই উস্তাদ আছেন। যাঁকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে আমার আজকের আসা।
আমার মনে পড়তে লাগলো ইছামতি মাদরাসার সেকালের ছাত্র-শিক্ষকদের আমল-আখলাক আর দ্বীনি জিন্দেগীর সুন্দর সুন্দর দৃশ্যাবলী। আমার বাবাও ঐ সময় এখানকার উস্তাদ ছিলেন। আমার দাদা হাজি আ. মান্নান ছিলেন ৬০-এর দশকে জকিগঞ্জের প্রথম দিকের তাবলিগে যোগদানকারী সক্রিয় মুবাল্লিগ। পাক, ভারত, আফগান, বেলুচ, বঙ্গ, পাঞ্জাব সর্বত্র লাগিয়েছেন একের পর এক বেশুমার চিল্লা। অত্যন্ত গরম মেজাযের হওয়ায় তাবলীগ বিরোধী কোন আলোচনা সইতে পারতেন না। সেই গরম হাজি আ. মান্নান মুহাদ্দিস সাহেবের নাম আসলেই সম্মান জানাতেন। চিল্লা থেকে শিখে আসা সুন্নত, মুস্তাহাব আমলের সাথে হুজুরের আমল, চাল চলন মিলিয়ে দেখতেন। তাঁর সুন্নতের পাবন্দী দেখে দাদা মুগ্ধ হতেন। তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। কালিগঞ্জ বাজার জামে মসজিদে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে হুজুরের প্রতি রবিবারের ধারাবাহিক তাফসিরুল কুরআনে আমার দাদা ছিলেন নিয়মিত শ্রোতা।
মাঝখানে নাশতা আসলো। এরই ফাঁকে মাওলানা খালেদ তার দুই শিশু সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। হুজুরের সামনে বেয়াদবীর ভয়ে কথা না বলে আমি তাদের কানে কানে আদর ও থ্যাংকস দিলাম। আমি উঠে গিয়ে তার সোফার পাশে দাঁড়াই। তিনি বসতে বললেন। আমার আম্মার সালাম ও দোঅার আবেদন বললাম। হুজুরও দোয়া চেয়ে সালাম বললেন। অনেক কথা হলো। দূর থেকে আসা অপর লোকজন চুপচাপ অপেক্ষা করছেন। আধাঘন্টার ওপর সময় পার হয়ে গেছে। পরিবেশ রক্ষায় আমি কথা না বাড়িয়ে টুপিটি সরিয়ে তার সামনে মাথা ঝুকিয়ে দিলাম। বললাম, হুজুর একটিবার হাত বুলিয়ে দিন। পবিত্র হাত খানা মাথায় ঘুরলো। আমি বুঝলাম, আসা পরিপূর্ণ।
শেষ মুসাফাহা করে বের হলাম। বাইরের ঘরের সামনে গেলে ভাবলাম হুজুরের স্মৃতিময় কুতুবখানায় একটা ডুব (ঢু) দিয়ে যাই। গেলাম। সাথে পুরাতন সাথী এবং নতুন কৌতুহলী সবাই আছেন। কুতুবখানার প্রতিটি কিতাব যেনো হুজুরের পরিধেয় বা খাদ্য সামগ্রীর মত। তিনি এই বয়সেও পড়ে থাকেন তাঁর অতি প্রিয় এই কিতাবরুমে। আমি সবগুলো বুকশেল্ফ ঘুরলাম। এর ফাঁকে খালেদ ভাই একটি বড় ল্যান্ডস্ক্যাপ রেজিষ্টার খুলে সামনে দিয়ে বললেন, দালায়েলুল খাইরাতের ইজাযত ইয়াফতাদের জন্য আমরা এই খাতাটি ব্যবহার করি। মেহেরবানী করে এখানে আপনার সংক্ষিপ্ত তথ্য লিখে দিন। কোনো দিন আপনাদের দোয়া চাইতে আমাদের সুবিধা হবে। আমি কাঁপা হাতে তাই করলাম।
বাড়ি থেকে বের হলাম। এক শ' কদম সামনে গিয়ে হুজুরের বড় সাহেবজাদা লেখক-গবেষক মাওলানা আব্দুল আউয়াল হেলালের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে নির্মানাধীন বেশ বড়সড়, দ্বিতল ভবনে "হাবিবিয়া পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র"দেখে বুকটা ভরে গেলো। এর পর আরো আরো সামনে বাড়লাম। দেখলাম হুজুরের সৌখিন ও পবিত্র মনের আবেগমাখানো ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সুন্দর হাফেজিয়া মাদরাসা। এই মাদরাসা থেকে হাফেজ হওয়া একজন বর্তমানে মিশর আল-আজহারে আছেন। কাকতালীয় ভাবে এই মুহুর্তে তিনি আমাদের সাথেও আছেন। তাঁর লেবাস-পোশাক, দাঁড়ি-মোচ দেখে আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম তিনি সরকারী নাকি কওমী লাইনের ছাত্র। তিনি ঘনিষ্ট হয়ে আমার সাথে আরো কথাবার্তা বললেন। দারুল আজহার ও আমার নাম শুনেছেন বলে মনে মনে পরিচয়ের আগ্রহের কথা বললেন।
মাগরিবের নামাজ হুজুরের প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া মাদরাসা মসজিদে আদায় করলাম। সবার নিকট থেকে বিদায় নিলাম। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে গাড়িতে উঠে বাড়িতে ফিরলাম। কিন্তু মনে হলো কী এক শক্তিশালী বস্তু যেন পেছন থেকে টেনে ধরেছে আমায়। এক স্মরনীয় দিন কাটলো এক বুযুর্গের সুহবতে। আমি নমুনা দেখলাম একটি বড় পরিবার দ্বীনি তাহযিব-তামাদ্দুনে আজো কিভাবে অক্ষত থাকতে পারে। এটা এই যুগে কিভাবে, কোন্ কঠোর শাসনে সম্ভব হলো! হুজুরকে তো কোন দিন শাসন, চাবুক, রাগ কিংবা ধমক দিতেও দেখিনি। এ যে নিশ্চয় তাঁর মজবুত ও প্রাকটিক্যাল আমলী জিন্দেগীর প্রভাব।
ক্ষণিকের সফর। কিন্তু সমৃদ্ধ হলাম অনেক শিক্ষায়- অভিজ্ঞতায়। আলোড়িত হলাম নতুন চেতনায়। আমি ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করি আমার জীবনের সেই মুল্যবান মুহুর্তগুলো।
আমরা আশায় বুক বাধিঁ, জকিগঞ্জের আকাশে আল্লাহ আরো রেখেছেন আবদুল মছাব্বির আইয়রি হুজুর ও ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর মতো দুনিয়া ও প্রচার বিমুখ বুযুর্গদ্বয়কে।
হে আল্লাহ!
আমাদের মাথার উপর আরো প্রলম্বিত করো তোমার রহমতের ছায়া। অক্ষত রাখো আমাদের সব আশ্রয়ের ছাতা।
...................................................................
লেখক: প্রিন্সপাল-দারুল আজহার ক্যাডেট মাদ্রাসা, সিলেট।