ওপারে ভাল থাকুন জেনারেল এরশাদ

জুবায়ের আহমদ ::::

সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামল দেখা হয় নি। কারন আমার জন্মের আগে তাঁর পতন হয়েছিল। বড়দের কাছে শুনেছি, তিনি ভাল শাসক ছিলেন। তার আমলে এত খুন-খারাবী, দূর্ণীতি ছিল না। তিনি ধর্মপ্রান শাসক ছিলেন।

কিছু বড় হওয়ার পরে যে এরশাদকে দেখেছি, তিনি কারারুদ্ধ, নির্যাতিত। দেশের মানুষ তাকে ভালবেসে পল্লীবন্ধু ডাকত। '৬৮ হাজার গ্রাম বাচলে বাংলাদেশ বাচবে'- শ্লোগান তুলা জেনারেল এরশাদ জেলে থাকাবস্থায় ৯১ ও ৯৬ সালের নির্বাচনে দু'বারই ৫ টি করে আসনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছিলেন।

তারপর আরেকটু বড় হওয়ার পর আসল ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন। এ সময়ে ক্লাস সিক্সে পড়তাম। অন্য অনেকের মতো বিকাল বেলা নির্বাচনী সভা-সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য শুনতে প্রতিদিন কাছাকাছি বড় বাজারগুলোতে যেতাম। সেই সময় আ'লীগ সরকারকে উৎখাত করতে এরশাদের জাতীয়পার্টিকে সাথে নিয়ে বিএনপি ৪ দলীয় জোট গঠন করেছিল। যদিও কি কারনে পরে এই জোটে আর এরশাদ থাকেন নি। কিন্তু থেকে যায় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের পিতা নজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয়পার্টির একটি অংশ। তখন বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয়পার্টি (মঞ্জু) নিয়ে গঠিত ৪ দলীয় জোটের পালে ভোটের হাওয়া বইছে।

জেনারেল এরশাদ তখন চরমোনাই-এর মরহুম পীর মাও. ফজলুল করিম সাহেবকে নিয়ে আলাদা ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ৪ দলীয় জোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। মনে পড়ে এখনও এরশাদের লাঙল মার্কার মিছিলে গ্রামের সাধারন মানুষরা বেশী সাড়া দিত।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সরাসরি দেখার তখনও সুযোগ হয় নি। আমাদের জকিগঞ্জ উপজেলাকে উনি পছন্দ করতেন। প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় ও পরে একাধিকবার জকিগঞ্জে এসেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারত কর্তৃক টিপাইমুখ বাধের প্রতিবাদে লংমার্চ নিয়ে ঢাকা থেকে জকিগঞ্জ এসেছিলেন এরশাদ। সমাবেশে আসার পথে রতনগঞ্জ বাজারে গাড়ী থেকে নেমে সাধারন মানুষের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। সেই দিন প্রথম কোন রাষ্ট্রপধানের হাত ছোয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার।

জকিগঞ্জ সরকারী হাইস্কুলের খেলার মাঠে জনসভা শেষে তাঁর প্রিয় ফুলতলী ছাহেব বাড়ীতে আসেন সফরসঙ্গী সহ। ছাহেব বাড়ীতে রাতের খাবার গ্রহন করেন। ছাহেব কিবলাহ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে ছাহেববাড়ীতে আয়োজিত সভায় এরশাদ মুর্শীদে রবহক আল্লামা বড় ছাহেব কিবলাহ'র হাতে মুসাফা করার দৃশ্য এখনো স্মৃতিতে ভেসে উটে। ছাহেব কিবলাহ (রহ.)-কে খুব শ্রদ্ধা করতেন স্মৃতিচারন করে বলেছিলেন,  ফুলতলীর ছাহেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন, অনেক দোয়া পেয়েছি তাঁর।

মূলত সেই দিন থেকে জাতীয়পার্টির সমর্থক না হলেও পছন্দের শীর্ষ রাজনিতিকদের তালিকায় এরশাদ সাহেবের নাম। তাছাড়া পত্রিকায় অনেক সময় দেখতাম ছারছীনার দরবার শরীফ সহ অনেক ওলী আউলিয়ার সান্যিধ্যে এসেছেন তিনি। 

আজ এরশাদ নেই, কিন্তু তার অনেক যুগান্তকারী কাজের জন্য ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় হয়ে থাকবেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
...................................................................
লেখক: সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জকিগঞ্জ উপজেলা আল-ইসলাহ ও সম্পাদক সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত।

নবীনতর পূর্বতন