মাওঃ মহি উদ্দিন খাঁন
ফুলতলী হুযূরের সাথে আমার পরিচয় বহুদিন আগে থেকে। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁকে আমি কী পরিমাণ শ্রদ্ধা করি তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আমি ছাত্র বয়স থেকেই তাঁকে নানাভাবে দেখেছি। আমার মনে পড়ে পঞ্চাশ দশকের দিকে একদিন বাংলাদেশের বড় বড় আলেমদের এক বৈঠকে মাগরিবের নামাযের সময় হলে হযরত মাওলানা আতহার আলী (র.) ইমামতির জন্য ফুলতলী ছাহেবকে বলেন। তখন ফুলতলী ছাহেব বলেন, ‘আমরা একজন হাফিয ছাহেবের পেছনে নামায পড়ব’। একথা বলে তিনি আতহার আলী (র.)-এর দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। আতহার আলী (র.) বলে উঠলেন, ‘আপনি তো হাফিযের দাদা’। আতহার আলী (র.) হযরত ফুলতলী (র.)-কে কী দৃষ্টিতে দেখতেন তা তার মন্তব্য থেকেই অনুমান করা যায়। সেদিন সকল আলেমের নামাযের ইমামতি ফুলতলী (র.)-ই করেছিলেন।
আমি তাঁর মাঝে এমন কিছু গুণ প্রত্যক্ষ করেছি যেগুলো খুবই বিরল। তিনি একাধারে সাহসী, কষ্ট সহিষ্ণু, বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও দীনের তরে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। দীনের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেয়ার জন্য প্রতি প্রস্তুত থাকতেন।
আমি হযরত ফুলতলী (র.)-এর মাঝে শহীদে বালাকোট হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ (র.)-এর প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি। তাঁর মাঝে সায়্যিদ (র.)-এর চেতনা যথাযথ ভাবে পরিস্ফুুট ছিল। সায়্যিদ (র.)-এর চেতনাকে তিনিই আমাদের দেশে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা হুযূরকে আল-কুরআন আল-কারীমের খাদিম হিসেবে কবূল করেছিলেন। তিনি আল-কুরআন বিশুদ্ধভাবে পাঠের যে অনুপম ব্যবস্থা করে ও রেখে গেছেন তা এককথায় অসাধারণ। আমার মনে হয়েছে আল্লাহ কুরআনের খিদমতের জন্য তাঁকে বিশেষভাবে বেছে নিয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন সর্বোতভাবে মানুষের কল্যাণকামী। অন্যের উপকার করা, অন্যের দুঃখে কষ্ট পাওয়া এ গুণগুলো তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্টের অন্যতম দিক।
তিনি অগণিত মাদরাসা মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মাদরাসা শিক্ষার বিস্তার ও এর স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় তিনি ছিলেন আপসহীন। তিনি জীবন সায়াহ্নে মাদরাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় লংমার্চ নিয়ে ঢাকা এসেছিলেন। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ লংমার্চ পরবর্তী সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ আমার হয়েছে। আমি তাঁর কাছেই ছিলাম।
ছোট খাটো কিছু মাসআলায় ভিন্নমতের কারণে কেউ কেউ তাঁর বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইলে আমি সবসময় সোচ্চারকন্ঠে এর প্রতিবাদ করেছি। এমনকি আমি জমিয়তের এক সভায় প্রস্তাব করেছিলামÑ‘আসুন আমরা ফুলতলী হুযূরকে আমাদের পৃষ্ঠপোষক মনোনীত করি।’ তখন অনেকে বলেছিলেনÑ‘তিনি এতে রাজি হবেন নাকি?’ বলেছিলাম- ‘আমি গিয়ে যদি আবদার করি, হুযূর আমার কথা ফেলবেন না।’ এটা আমি বলেছি আমার মনের দাবি থেকে। কারণ আমি জানতাম তিনি আমাকে কত ভালোবাসেন।
আল্লাহর পথের এ মর্দে মুজাহিদ আমাদের মাঝে নেই। আমরা যদি তাঁর রেখে যাওয়া অমূল্য খিদমতগুলো ধরে রাখতে পারি তাহলে এ মিল্লাতের জন্য তা হবে কল্যাণকর।
[লেখক : সম্পাদক-মাসিক মদীনা, আলিমে দীন ও ইসলামী সাহিত্যের দিকপাল] (সূত্র : হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) স্মারক)