সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত :::
সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। বড় ছেলে আল মাহিগীর শাদ এরশাদ, শাহতা জারাব এরিক, পালিত কন্যা জেবিন (লন্ডনে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন) ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে এই সম্পদ ভাগ করে দেয়া হয়। কিছু সম্পদ এরশাদের কয়েকজন পালিত কন্যা এবং কিছু সম্পত্তি পার্টির অফিস ও এতিমদের জন্য ট্রাস্টে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগেই এই ভাগ-বণ্টন সম্পন্ন হয়। জাপা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ভাগ বাটোয়ারায় আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। মনোনয়নপত্র জমাদানের পরপরই তাকে সিএমএইচ এ ভর্তি হতে হয়। অতপর উন্নত চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তবে তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে এসেই তিনি ঢাকার সিএমএইচ এ ভর্তি হন। ওই সময় সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে এরশাদের ইচ্ছায় তাঁর সম্পত্তি ভাগাভাগি করা হয়। সম্পত্তি বণ্টনের তার পরপরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবার সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন।
সুত্র জানায়, এরশাদের বিপুল পরিমান ভুসম্পত্তি এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে পদাগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। আগে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা থাকলেও এখন সেগুলো নেই। গুলশান-২ এর বাড়িটি রওশন এরশাদকে দিয়েছেন এরশাদ বহু আগেই। বারিধারার ১০ নম্বর দূতাবাস রোডের ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন সেটি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেওয়া হয়েছে।
পালিত পুত্র আরমানকে দেওয়া হয়েছে গুলশানের অপর একটি ফ্ল্যাট। রংপুরের সম্পত্তি পেয়েছেন তার ভাই জিএম কাদের ও ভাতিজা আতিক শাহরিয়ার। তিনি রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন। কয়েক বছর আগে চলচিত্র পরিচালক শফি বিক্রমপুরির কাছ থেকে কেনা ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়টি এরশাদের ব্যক্তিগত নামে ছিল। এটি তিনি পার্টিকে দান করেছেন। দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান এরশাদের গুলশান বনানী এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটে দোকান রয়েছে। দোকান রয়েছে বনানীর মৈত্রী মার্কেটে। এগুলো সস্তান, ভাই, ভাতিজিদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিয়েছেন। এই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দলের পরিবারের কেউ সরাসরি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তারা পরিচয় গোপন রেখে বলেছেন, এরশাদের নগদ টাকাসহ সম্পত্তি কী কী আছে তা পরিষ্কারভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা জানেন না।
সুত্র জানায়, গুলশান-বনানীতে কয়টি দোকান রয়েছে তার হিসাব কারও কাছে নেই। এরশাদের অসুস্থতা বাড়তে থাকলে তিনি এরিক এরশাদকে দেখাশোনা ও তার সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য একজন ব্যারিস্টারকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন ২০০৭ সালে রওশনের সঙ্গে বিরোধে দল ভেঙ্গে রওশন নিজেই দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। ওই সময় এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। তখনো এরিক এরশাদের দায় দায়িত্ব ব্যারিষ্টার আনিসেও উপর ন্যাস্ত করা হয়েছিল।
জানা গেছে, বেগম রওশন এরশাদ বর্তমানে অসুস্থ। তার নামে থাকা সম্পত্তিগুলো তার পুত্র শাদ এরশাদ ও পালিত কন্যা জেবিনের নামে উইল করে দিয়েছেন বলে সুত্রের দাবি। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে কেউ বলেননি। তবে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের অনেক সম্পত্তি তার দলের কিছু নেতা কুক্ষিগত করেছেন বলে জানা যায়।
জাতীয় পার্টির ভেঙ্গে নাজিউর রহমান মঞ্জু যখন পৃথক দল গঠন করে বিএনপির সঙ্গে জোটে অবস্থান নেন, তখন এরশাদের সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল বলে সুত্র জানায়। ওই সময় তেজগাঁয়ে একটি প্রকাশনী সংস্থার নামে বিপুল পরিমান জমি ওই সময় নাজিউর নিয়ে নেন। জানতে চাইলে জাপার একাধিক নেতা জানান, এই ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে অনেকদিন থেকে।
সবচেয়ে বড় খবর হলো এরশাদ সারাদেশের অনেকগুলো পরিবারকে চালিয়েছেন, কিছু অসহায় ইতিমকে নিয়মিত মাসোহারা দিতেন। তাদের এখন থেকে ট্রাষ্ট থেকে অর্থ দেয়া হবে।