সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত :::

পাঁচ বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সামলানোর পর এবার অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল
খেলাপি ঋণের হার দুই অঙ্কের কোঠা অতিক্রম করে যাওয়ায় প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই এই অর্থ উদ্ধারে নতুন কৌশল খোঁজার তাগিদ দিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল
সোমবার শেখ হাসিনার নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
গত পাঁচ বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সামলে আসা মুস্তফা কামাল নতুন দায়িত্ব নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পরপরই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
খেলাপি ঋণকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। খেলাপি ঋণের হার দুই অঙ্কের কোঠা অতিক্রম করে যাওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।
গত ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিতও খেলাপি ঋণকে ব্যাংক খাতের সমস্যা হিসেবে স্বীকার করে আসছিলেন।
বিদায়ী সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন; তাদের কাছে অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বৈঠকে মুস্তফা কামাল ঋণ আদায় করার নতুন কৌশল বের করার তাগিদ নিয়ে বলেন, “আমরা ভালো ও খারাপকে একসাথে মেলাব না। কাউকে জেলেও পাঠাব না, বন্ধও করে দেব না।”
“স্প্রেড (সুদ ও আমানতের হারের পার্থক্য) বেশি হলে আমানত ফেরত আসে না এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যত কম রেটে ঋণ নিতে পারবেন, তত কম রেইটে ঋণ দিতে পারবেন,” ব্যাংকারদের উদ্দেশে বলেন তিনি।

নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা
মুস্তফা কামাল বলেন, “নন পারফরমিং লোনের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা লম্বা সময় ধরে চলে আসছে, এটি ১৩ শতাংশ। এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
“নিচে নামিয়ে আনতে অনেক কঠিন হতে হবে। আত্মীয়-স্বজন চিনব না, যে দেয় এবং যে দেয় না, তাদের এক জায়গায় রাখব না। যে দেয় তার জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দেব।”
ঋণ দেওয়ার সময় কর্মকর্তাদের যাচাই করার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
“যে যাচাই বাছাই করে লোন দেওয়া হয়, তা ভালো করে করতে হবে। মাঝে মাঝে দেখা যায় চুক্তি করার পর চার্জ হিসেবে তা পাই না। এগুলো দেখার জন্য প্রফেশনাল ফার্ম নিয়োগ করতে হবে। তাহলে ওই লোনগুলো ব্যাড লোনে যাবে না।
“আরেকটি অবকাঠামো হবে মানুষের আস্থা তৈরি করা, মানুষকে বোঝাতে হবে টাকা নিয়ে ব্যবসায় লাভ করতে পারবেন।”
পুঁজিবাজারে ‘চাই’ প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারী
পুঁজিবাজার নিয়েও নিজের ভাবনার কথা বলেন নতুন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার এক দিন-দুই দিনের জন্য না, লোভে পড়ে এখানে আসা যাবে না। দীর্ঘ সময়ের জন্য এগুলো বিবেচনা করতে হবে, প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসতে হবে।”
“নির্বাচনের পর বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা গেল পুঁজিবাজারে,” মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজার প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুরে না দাঁড়ানোয় হতাশ বিনিয়োগকারীদের অনেকে।
মুস্তফা কামাল বলেন, “যারা এদেশ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে, তাদের আবার এদেশে নিয়ে আসতে সুযোগ করে দেওয়া হবে, যাতে তারা ম্যাক্সিমাম লাভ করতে পারে।”
বন্ড মার্কেট আরও প্রসারিত করার উপরও জোর দেন তিনি।
রাজস্বের নতুন ক্ষেত্র ‘খুঁজতে হবে’
রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে নতুন নতুন খাতের দিকে নজর দিতে বলেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

শপথ নিয়ে সোমবারই নিজের নতুন মন্ত্রণালয়ে যান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
বৈঠকে উপস্থিত এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, “এবার প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা রাজস্ব দিতে হবে।
রাজস্ব আদায়ের নতুন খাতগুলোর দিকে দৃষ্টি হবে এবং দোকানগুলোতে ক্যাশ রেজিস্ট্রার মেশিন সরাতে হবে। এছাড়া বন্দরগুলোতে স্ক্যানার বসাতে হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এবার ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে পারব।”
মুস্তফা কামাল বলেন, “সাধারণ মানুষ রাজস্ব দিতে চায়, আমাদের লোকরা যাতে নিতে পারে সে দিকে খেয়াল করতে হবে। একটি উইন-উইন অবস্থা তৈরি করতে হবে।”
এনবিআরে বর্তমানে ৩৫ হাজার লোকবল রয়েছে জানার পর মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে লোকবল বৃদ্ধি করা হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় প্রয়োজনে আরও রাজস্ব অফিস করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারও ছিলেন।
নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এখানে সবাই অভিজ্ঞ। আপনাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে আরও এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির অগ্রগতির যে ধারা, তা বজায় রাখতে হবে।
“এখন থেকে ১০ বছর আগে অর্থনীতি নিয়ে লজ্জা পেতাম। আমরা বর্তমানে অনেক অর্জন করেছি। আমাদের স্বপ্ন যে গতিতে এগিয়েছি, এ গতি ২০৪১ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে, উন্নত বিশ্বে পরিণত হতে চাই।”