বিএনপির বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যেতে চান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ থেকে বিকল্পধারার মুখপাত্র মাহি বি চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তাছাড়া নির্বাচনে ভরাডুবির পর আর তাকে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জীবদ্দশায় ইজ্জত-মান-সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে চাই। তাছাড়া বয়স তো অনেক হয়েছে এখন রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিতে চাই। আর যে দলের রাজনীতি করি সে দলেরও কোনো সঠিক কর্মপন্থা নেই। বর্তমানে নেতার হাতে রাজনীতি নেই, গোটা রাজনীতিতে চলছে দস্যিপনা- যোগ করেন বিএনপির এ নেতা।
এই মুহুর্তে আত্মজীবনী লেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।
প্রসঙ্গত, রাজনীতিতে বহুল আলোচিত-সমালোচিত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বায়ান্ন থেকে একাত্তর- বাংলাদেশের সকল আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে একসময় বঙ্গবন্ধুর স্নেহের পাত্রে পরিণত হন তিনি। জাতীয় পার্টির শাসনামলে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদও অলংকিত করেন এ জননেতা।
অনেক সময় ধরে তিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করলে তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকলেও, শারীরিক অসুস্থতা এবং দলে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার কারণে অনেকটাই অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে।
এক নজরে শাহ মোয়াজ্জেমের রাজনৈতিক জীবন:
১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে জন্ম শাহ মোয়াজ্জেম প্রায় অধিকাংশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন। ১৯৫২ সালে ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথম কারাবরণ করেন।
১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর শাসনামলে কারাবরণ করেছেন তিনি। বন্ধুমহলে পরিচিত ‘কারাগারের পাখি’ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জীবনের প্রায় ২০ বছর জেলে কাটিয়েছেন।
১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের সময় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
১৯৬৬-এর ৬ দফা, ১৯৬৯ সালে ১১ দফা আন্দোলন ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা অগ্নিঝরা ভাষণ দেন তিনি।
হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম চিফ হুইপ হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন নানা স্থানে ছুটে যান।
১৯৭০ ও ’৭৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আবার হুইপ হন। আশির দশকে এ নেতা জাতীয় পার্টির মহাসচিব, মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা ও উপ-প্রধামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।